দক্ষিণ এশিয়ার শেয়ারবাজারগুলো অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে নুতন রেকর্ড গড়ে চলেছে। ভারত এবং পাকিস্তানের শেয়ারবাজার বর্তমানে তার ইতিহাসের সর্বোচ্চ চূড়ায় অবস্থান করছে। শুধু তাই নয়, অর্থনৈতিকভাবে দেওলিয়া হয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কার শেয়ারবাজারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশের শেয়ারবাজার।
ভারতের বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের ইনডেক্স উচ্চতার নুতন রেকর্ড গড়ে বর্তমানে ৬৯ হাজার৪০০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। যে পাকিস্তানে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে দীর্ঘদিন থেকে, সেই পাকিস্তানের করাচী ইনডেক্স অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে বর্তমানে ৬৪ হাজার ইনডেক্সে অবস্থান করছে। কিছুদিন আগেও অর্থনৈতিকভাবে দেওলিয়া হয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কার শেয়ারবাজারের ইনডেক্স ছিল ৭ হাজার, সেই ইনডেক্স এখন বেড়ে ১০ হাজার ৭০০-তে অবস্থান করছে। ২০১০ সালে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ৯ হাজার ইনডেক্স ছুঁয়েছিল। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ ১৩ বছর। কিন্তু দেশের শেয়ারবাজার আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বিগত ১৩ বছরে নুতন করে বাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে একশ’র ওপর কোম্পানি এবং কোম্পানিগুলোর মূলধন বৃদ্ধি পেয়েছে দিগুণ। তারপরও দেশের ইনডেক্স তার ১৩ বছর আগের গড়া রেকর্ড ভাঙ্গাতো দূরের কথা, তার ধারে-কাছেও যেতে পারেনি। বর্তমানে দেশের শেয়ারবাজার ৬ হাজার ২৫০ ইনডেক্সে অবস্থান করছে।
২০১০ সালে ভারতের ইনডেক্স ছিল ১৮ হাজার আর পাকিস্তানের ইনডেক্স ছিল ১১ হাজার। গত ১৩ বছরে ভারতের ইনডেক্স বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৪০০ শতাংশ, পাকিস্তানের ইনডেক্স বৃদ্ধি পেয়েছে ৬০০ শতাংশ, আর শ্রীলঙ্কার ইনডেক্স বৃদ্ধি পেয়েছে ৪০ শতাংশ। শুধুমাত্র বাংলাদেশের ইনডেক্স গত ১৩ বছরে ঋণাত্মক অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
মহামারি করোনাভাইরাস, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা কোন কিছুই ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার শেয়ারবাজারকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
শেয়ারবাজার বিশ্লেষক এবং বিনিয়োগকারীদের ভাষ্য মতে গত ১৩ বছরে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সুশাসনের অভাব। পয়েন্ট আকারে বলতে গেলে বেশ কিছু কারণ বলা যায়। যেগুলো হলো-
১. দুর্বল কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি;২. কোম্পানিগুলোর হিসাব বিবরণীতে অস্বচ্ছতা;৩. ভালো কোম্পানির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ তৈরি করতে না পারা;৪. দুর্বল কোম্পানির প্রতি বিএসইসির অধিক আগ্রহ; ৫. দুর্বল কোম্পানি নিয়ে কারসাজি বন্ধে বিএসইসির কার্যকরী পদক্ষেপ না থাকা।
একটি দেশের শেয়ারবাজারকে এগিয়ে নিতে সব থেকে বেশি প্রয়োজন সুশাসন এবং জবাবদিহিতা। আর এই সুশাসন এবং জবাবদিহিতার বেশ অভাব আমাদের দেশের শেয়ারবাজারে। সুশাসন এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারও নুতন উচ্চতায় চলে যাবে। অন্যতায় শুধু ১৩ বছর কেন, আগামী ৫০ বছরেও দেশের শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।
শেয়ারনিউজ, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩
South asia stock market