বাতিল হচ্ছে বিশেষ আইনে করা চুক্তি
দ্বীপ জেলা ভোলার গ্যাস সিএনজি (কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস) করে মূল ভূখণ্ডে সরবরাহ করতে উন্মুক্ত দরপত্র ডাকতে যাচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে জ্বালানি বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে করা হলে বর্তমানের চেয়ে কম খরচে ভোলার গ্যাস মূল ভূখণ্ডে সরবরাহ করা যাবে। এতে সরকার ও গ্রাহক উভয় পক্ষই লাভবান হবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এ প্রসঙ্গে বুধবার কালবেলাকে বলেন, ভোলার গ্যাস সিএনজি করে সরবরাহ করতে বিশেষ আইনে একটি কোম্পানিকে কাজ দেওয়া হয়েছে। আমরা বিশেষ আইন স্থগিত করেছি। এখন ভোলার গ্যাস সিএনজি করে সরবরাহ করতে উন্মুক্ত দরপত্র ডাকা হবে। আমরা জ্বালানি খাতের সব কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চাই।
বুধবার কালবেলায় ভোলার গ্যাস নিয়ে ‘বিপুর মদদে ইন্ট্রাকো হাতিয়ে নিয়েছে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশের পর বর্তমানে নির্দিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে থাকা বিশেষ আইনের চুক্তি বাতিল করে উন্মুক্ত দরপত্র ডাকার উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে জ্বালানি বিভাগের সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভোলার গ্যাস সিএনজি করে সরবরাহ করতে বিশেষ আইনে তৎকালীন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীকে কাজটি দেওয়া হয়। ফলে কোম্পানিটি যে দাম নির্ধারণ করেছে, সেই দামেই শিল্পকারখানার গ্রাহকরা নিতে বাধ্য ছিলেন। বর্তমানে বেশি দাম হওয়ার কারণে গ্রাহকদের অনেকেই এই গ্যাস কিনছেন না। এই অবস্থায় বর্তমানে ভোলার গ্যাস সিএনজিকরণ বন্ধ রয়েছে। জানা গেছে, গত বছর ভোলার গ্যাস সিএনজি করার উদ্যোগ নিলে ৮ থেকে ১০ কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করে। ওইসব কোম্পানরি সঙ্গে পেট্রোবাংলা বৈঠকও করেছিল; কিন্তু পরবর্তী সময়ে সরকার-ঘনিষ্ঠ কোম্পানি ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন পিএলসিকে বিশেষ আইনে কাজটি দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ২১ মে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির সঙ্গে ১০ বছরের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করে ইন্ট্রাকো। পরে একই বছরের ২১ ডিসেম্বর ধামরাইয়ের অবস্থিত গ্রাফিক্স টেক্সটাইল লিমিটেডের কারখানায় সিএনজি আকারে ভোলার গ্যাস সরবরাহের মধ্যদিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। ৩ হাজার পিএসআই (প্রতি বর্গ ইঞ্চি) চাপে প্রতি সিলিন্ডারে গ্যাসের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৫০০ ঘনমিটার।
বিশেষ আইনে করার এই চুক্তির মাধ্যমে কোম্পানিটি ভোলা থেকে প্রাথমিকভাবে ৫ মিলিয়ন ঘনফুট এবং পরবর্তী সময়ে ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট (৭ লাখ ৮ হাজার ৪১৫ ঘনমিটার) গ্যাস দৈনিক সিএনজি আকারে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করবে। চুক্তি অনুযায়ী, ইন্ট্রাকো সরকার থেকে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস কিনেছে ১৭ টাকায়। আর বিক্রি করছে ৪৭ টাকা ৬০ পয়সায়। ঘনমিটারপ্রতি লাভ ৩০ টাকা ৬০ পয়সা। এ হিসাবে দৈনিক লাভের পরিমাণ ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আর মাসে লাভ ৬৫ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ভোলার গ্যাস সরবরাহ করে মুনাফার নামে ৪৫৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় ইন্ট্রাকো।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, উন্মুক্ত দরপত্র হলে ভোলার গ্যাস আরও কমদামে সরবরাহ করা যাবে। ভোলার গ্যাসকে ১ হাজার পিএসআই থেকে বুস্টার কম্প্রেসরের মাধ্যমে ৩ হাজার পিএসআই প্রেসারে কম্প্রেস করে মোবাইল স্টোরেজের মাধ্যমে জল এবং স্থলপথে সহজে নিয়ে আসা যায়। এতে করে কম্প্রেসর চার্জ অর্ধেকেরও কম হবে এবং ডিকম্প্রেসন চার্জ একেবারে বাদ যাবে। সরকার চাইলে কয়েকশ ইন্ডাস্ট্রিকে অনুমতি দিতে পারে, যারা ফিড গ্যাসের মূল্য (ঘনমিটার ১৭ টাকা) পরিশোধ করে নিজস্ব খরচে কম্প্রেসড ও পরিবহন করে তাদের ইন্ডাস্ট্রিতে নিয়ে আসবে। এ ছাড়া প্রতি ঘণ্টায় ৫০০ ঘনমিটার গ্যাস প্রক্রিয়া করার সক্ষমতার দেশীয় ‘বুস্টার কম্প্রেসর’ মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা, যেখানে প্রতি ঘণ্টায় বিদ্যুৎ খরচ হবে মাত্র ৫০ কিলোওয়াট।
অন্যদিকে বর্তমানে যে মোবাইল স্টোরেজগুলো বিদ্যমান সেগুলো একেকটি প্রতিবার ৩ হাজার ঘনমিটার গ্যাস বহন করতে পারে। ভোলা থেকে ঢাকা ও আশপাশে যাতায়াত করতে যদি প্রতিবার ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়, তাহলে পরিবহন খরচ হবে প্রতি ঘনমিটারে মাত্র ৭ থেকে ৮ টাকা। প্রতিযোগিতামূলক বাজার হলে এতে সরকার ও গ্রাহক উভয়ই লাভবান হবে।
bhola gas Kalbela.com