December 22, 2025 12:01 am
Home Stock Market বীচ হ্যাচারির আয় ১.৬২ কোটি টাকা, দেখিয়েছে ১১.৮৫ কোটি

বীচ হ্যাচারির আয় ১.৬২ কোটি টাকা, দেখিয়েছে ১১.৮৫ কোটি

by fstcap

শেয়ারবাজারে আরেক জালিয়াত কোম্পানি বীচ হ্যাচারি। যে কোম্পানিটি দীর্ঘদিন পরে ২০২২-২৩ অর্থবছরে উৎপাদনে এসেই ভূয়া আয় ও মুনাফা দেখিয়ে প্রতারণা করছে সাধারন বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে। এ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ভূয়া আয় দেখানোর সঙ্গে ব্যয়ের ক্ষেত্রেও মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। ফলে নিরীক্ষককে আয় ও ব্যয়ের কোন ব্যাখ্যা বা প্রমাণাদি দেখাতে পারেনি।

কোম্পানিটির ২০২২-২৩ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

কক্সবাজারে অবস্থিত বীচ হ্যাচারির ভবন ও হ্যাচারি ইক্যুপমেন্ট মেরিন ড্রাইভ রোড নির্মাণের জন্য সরকার ভেঙ্গে ফেলেছিল। এছাড়া হ্যাচারি প্লান্ট গঠনের জন্য থাকা কিছু জমিও অধিগ্রহন করেছিল। যাতে করে ২০১৬ সালের ২৪ জানুয়ারি থেকে কোম্পানির পুরো বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তবে চিংড়ি ব্যবসায়ী এ কোম্পানিটি ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে ব্যবসায় ফিরেছে বলে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে রয়েছে প্রতারণার আশ্রয়।

বীচ হ্যাচারির আর্থিক হিসাবে ১১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি দেখানো হয়েছে। কিন্তু ব্যাংক হিসাবে পাওয়া গেছে মাত্র ১ কোটি ৬২ লাখ টাকা। বিক্রির সঙ্গে ব্যাংকে হিসাবের তথ্যের অসামঞ্জস্যের বিষয়ে বীচ হ্যাচারি কর্তৃপক্ষ নিরীক্ষককে কোন ব্যাখ্যা দেননি। এমনকি কোন প্রমাণাদি দেননি। ফলে ওই বিক্রির সত্যতা কতটুকু, তা যাচাই করতে পারেনি নিরীক্ষক।

এদিকে ওই বিক্রির বিপরীতে ৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকার উৎপাদন ব্যয় হয়েছে বলে আর্থিক হিসাবে দেখানো হয়েছে। এক্ষেত্রেও নিরীক্ষককে কোন প্রমাণাদি দেখাতে পারেনি বীচ হ্যাচারি কর্তৃপক্ষ। ফলে ওই ব্যয়ের সত্যতা যাচাই করা যায়নি।

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, কৃত্রিম আর্থিক হিসাব দেখানো নতুন কিছু না। এর পেছনে প্রধান কারন হিসেবে রয়েছে শাস্তির আওতায় না আসা। বীচ হ্যাচারির ক্ষেত্রেও হয়তো আমরা সেটাই দেখতে পাবো।

তিনি বলেন, সাধারনত নিরীক্ষকরা কৃত্রিম আর্থিক হিসাব দেখাতে কোম্পানিগুলোকে সহযোগিতা করেন। সেখানে বীচ হ্যাচারি নিয়ে নিরীক্ষক যে তথ্য তুলে ধরেছেন, তাহলে কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা যে আরও কত ভয়াবহ, তা অকল্পনীয়। এমন একটি কোম্পানিকে কিন্তু শাস্তির আওতায় আনতে কোন পরিশ্রম করতে হবে না। নিরীক্ষকের তথ্যই শাস্তি দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

আরও পড়ুন…..

বীচ হ্যাচারির অনেক সম্পদ ও দায়ের সত্যতা পায়নি নিরীক্ষক

বীচ হ্যাচারির আর্থিক হিসাবে দেখানো অফিস ও প্রশাসনিক ব্যয় হিসাবে ১ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং সুদজনিত ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ের সত্যতা পায়নি নিরীক্ষক। এ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ উভয় বিষয়ে সঠিক অ্যাকাউন্টস করেনি এবং প্রমাণাদি দেখাতে পারেনি।

এই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আর্থিক হিসাবে ব্যয়জনিত দায় দেখিয়েছে ১ কোটি ১ লাখ টাকা। কিন্তু তারা অ্যাকাউন্টস সঠিকভাবে করেনি এবং ওই দায়ের স্বপক্ষে কোন প্রমাণাদি দেখাতে পারেনি। ফলে ওই দায়ের সত্যতা যাচাই করা যায়নি।

এসব বিষয়ে শেয়ারাবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, অর্থবছর শেষে নিরীক্ষকের মতামতসহ তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বার্ষিক প্রতিবেদন কমিশনে আসে। যা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ যাচাই-বাছাই করে। এতে কোন অনিয়ম বা অসঙ্গতি পেলে, কমিশন আইন অনুযায়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

এছাড়া ১২ লাখ টাকার গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেসজনিত দায় সমন্বয় করা হয়েছে বলে আর্থিক হিসাবে উল্লেখ করলেও তার স্বপক্ষে কোন প্রমাণাদি দিতে পারেনি বীচ হ্যাচারি কর্তৃপক্ষ।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, বীচ হ্যাচারিতে ২০ লাখ টাকার অবন্টিত লভ্যাংশ রয়েছে। যা দীর্ঘদিন ধরে হিসাবে দেখানো হচ্ছে। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সঠিক অ্যাকাউন্টস রক্ষণাবেক্ষন করে না।

এই কোম্পানির কাছে ২০১২-১৩ অর্থবছর পর্যন্ত ১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা দাবি করে চিঠি দিয়েছে আয়কর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ওই দাবি পরিশোধে পর্যাপ্ত প্রভিশনিং করেনি।

এদিকে বীচ হ্যাচারি কর্তৃপক্ষ আইএএস-১২ এর ৫৮ অনুযায়ি, ডেফার্ড ট্যাক্স গণনা করেনি। এছাড়া আইএএস-২৪ এর ১৭ অনুযায়ি রিলেটেড পার্টি ডিসক্লোজারস দেয়নি।

এসব বিষয়ে জানতে বীচ হ্যাচারির কোম্পানি সচিব মো. নূর ইসলামের ব্যক্তিগত ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, ২০০২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া বিচ হ্যাচারির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৪১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৬৫.০৩ শতাংশ। কোম্পানিটির বুধবার (০৬ ডিসেম্বর) শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৪৯ টাকায়।

Source: arthobanizzo

 

Beachhatch Beach Hatchery manipulation financial statement

You may also like