বৈদেশিক ঋণের চড়া সুদহার এবং মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে দেশের বেসরকারি খাত। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সুদহার গড়ে সোয়া শতাংশ থেকে বেড়ে সাড়ে ৮ শতাংশের কাছাকাছি চলে গেছে। এর ফলে ঋণগ্রহীতাদের পরিশোধ করতে হচ্ছে বাড়তি সুদ।
অন্যদিকে গত পৌনে দুই বছরে টাকার মান অনেকটাই কমেছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ডলারের দাম যেখানে ছিল ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা, সেখানে বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১১ টাকায়। বেশিরভাগ উদ্যোক্তাই ব্যাংক থেকে এ দামেও ডলার পাচ্ছেন না। তারা ডলার কিনছেন ১২২ টাকায় অথবা আরও বেশি দামে। সেই হিসাবে টাকার মান কমেছে ৪২ দশমিক ২০ শতাংশ।
টাকার এ অবমূল্যায়নের কারণে বিদেশি ঋণ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো বিপাকে পড়েছে। কারণ, অবমূল্যায়নের কারণে টাকার অঙ্কে ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে এবং এর ফলে ঋণের কিস্তি ও সুদের হার বেড়েছে। এ বাড়তি ব্যয়ের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা সংকুচিত তো হবেই, এমনকি লোকসানও গুনতে হতে পারে। এতে খেলাপি ঋণ আরও বাড়বে। এ পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত। কারণ বেসরকারি খাত হলো দেশের উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি। দেশের সিংহভাগ কর্মসংস্থানও হয় এ খাতে। কাজেই বেসরকারি খাতে মন্দা দেখা দিলে সার্বিকভাবে দেশের উন্নয়নের গতিও যে মন্থর হবে, তা সহজেই অনুমেয়। তাই যেভাবেই হোক, এ খাত যাতে সংকটে না পড়ে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বস্তুত ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এ মুহূর্তে দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় সমস্যা। ডলারের দাম যাতে স্থিতিশীল থাকে, সেদিকে বাংলাদেশ ব্যাংককে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে ডলার সংকট নিরসনে নিতে হবে কার্যকর ব্যবস্থা। ডলারের প্রবাহে যে মন্থরগতি বিরাজ করছে, তা দূর করতে হবে। দেশে ডলারের মূল জোগান আসে প্রবাসী আয় থেকে। রপ্তানি আয় অঙ্কের হিসাবে বড় হলেও প্রকৃত অর্থে প্রবাসী আয়ই বড়, কারণ রপ্তানি শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে এ আয়ের একটি বড় অংশ ব্যয় হয়ে যায়। সমস্যা হলো, ডলারের এ সংকট মুহূর্তে দেশে প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রবাসী আয় আসছে না। এর একটি বড় কারণ হুন্ডি বা অবৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণ। প্রবাসীরা যাতে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠায় সেজন্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে এ ব্যাপারে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে মনে করি আমরা। রিজার্ভ সংকট দূর করার জন্যই এটা জরুরি।
সূত্রঃ দৈনিক যুগান্তর
nongoverment organization dollar price international profit