বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, পুঁজিবাজারের ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এখনই। নতুন সরকার এসেছে। এখন আমাদের সামনের দিকে যাওয়ার সময়।
তিনি বলেন, এটা ব্রোকারদেরকেই করতে হবে। কেউ আমাদের কোনোদিন কিছু করে দেয়নি আর কেউ দিবেও না। এই আত্মবিশ্বাস ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রত্যেকের থাকতে হবে। পুঁজিবাজারে পুঁজি নিয়ে আসতে হবে, ধার করা টাকা দিয়ে পুঁজিবাজার চলে না।
মঙ্গলবার ডিএসই ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) স্টক ব্রোকারস পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড-২০২৩ এবং এশিয়া সিকিউরিটিজ ফোরামের সদস্যভুক্তি শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিএসইর চেয়ারম্যান ড. হাফিজ মোহাম্মদ হাসান বাবু। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আমাদের ক্যাপিটাল ফরমেশন গত ৫২ বছরে হয়নি। এখনো আমাদের ইন্ডাস্ট্রি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হলে নির্ভর করে ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিংয়ের উপর। আমাদের পুঁজিবাজারও নির্ভর করে ব্যাংকের উপর। এই জায়গাটা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ১৯৯৮ সালে যখন অটোমেশনের কথা হয়েছে তখন ৮ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা ছিল। এটা অনুদান হিসেবে দিয়েছিল। তখন রূপালী ব্যাংক থেকে লোন করে আমরা ডিএসই অটোমেশন করেছিলাম। এখন আমাদের সামনের দিকে যাওয়ার সময়। নতুন সরকার এসেছে। তাই ব্রোকারদেরকেই সব করতে হবে। পুঁজিবাজারে পুঁজি নিয়ে আসতে হবে। ধার করা টাকা দিয়ে পুঁজিবাজার চলে না।
কর ছাড়ের ব্যাপারে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি জানিনা কোন ট্যাক্স ব্রেক দেয়া সম্ভব কি না। আমাদের সরকার অনেক বড় হয়েছে। আমাদের ইকোনমিও অনেক বড় হয়েছে।আমরা আমাদের সক্ষমতা নিয়েই এগিয়ে যাব।
ডিমিউচুয়ালাইজেশনের ব্যাপার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের ডিমিউচুয়ালাইজেশন বোর্ড আছে। ১১ বছরেও আমরা ডিমিউচুয়ালাইজড হতে পারলাম না। যতক্ষণ পর্যন্ত না ৩৫ শতাংশ শেয়ার ডাইলুটেড হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ডিমিউচুয়ালাইজেশন হবে না।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি যখন ডিএসইতে কাজ করি তখন বিএসইসি ছিল না, মার্চেন্ট ব্যাংক ছিল না। অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ছিল না। ব্রোকাররাই সব করত৷ তারাই এক্সচেঞ্জের মালিক ছিল। তারাই আইপিও ইস্যু আনতো, তারাই নিজেরা ফান্ড ম্যানেজ করত। এতো রেগুলেশনের পরে এতদিনে আমাদের অর্জনটা কী হল? যে জায়গায় আমাদের যাওয়ার কথা ছিল সে জায়গায় আমরা নিজেদের নিয়ে যেতে পারি নাই।
তিনি বলেন, আমি মনে করি এটাই সঠিক সময়। ২০২৬ সালে আমরা এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন করে ডেভেলপিং কান্ট্রিতে যাব। এই দায়িত্বটা সবাইকেই উপলব্ধি করতে হবে। এই জায়গাটা একটা ট্র্যাপের মত। আমরা যেন এই ট্র্যাপে না পড়ে যাই। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
পুঁজিবাজারের মূল টার্নওভার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সবাই এগিয়ে যাব কিন্তু ক্যাপিটাল মার্কেট যদি পিছিয়ে থাকব তাহলে কিন্তু হবে না। এই মার্কেটের এসেন্স হল ট্রানজেকশন। যারা চিন্তা করে শুধু সূচক বাড়বে, ট্রানজেকশন বাড়বে তাহলে বাজার এগিয়ে যাবে না। বাজারের মূল হল টার্নওভার। আমাদের জিডিপির যে সাইজ রয়েছে সে অনুযায়ী আমাদের পুঁজিবাজারকে মূল অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত করতে পারিনি, সেভাবে আমাদের ইনকামও বাড়েনি।
বিএসইসি কমিশনার ড. মিজানুর রহমান বলেন, ডিবিএ এশিয়া অঞ্চলের মেম্বারশিপ লাভ করেছে এতে আমি অনেক আনন্দিত। আমি এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা যদি ক্যাপিটাল মার্কেটকে সাম্নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই তাহলে ডিবিএর সঙ্গে নিবিড় ভাবে কাজ করে যেতে হবে। বিএসইসি ইতোমধ্যে তা করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার বিষয়টি ব্রোকারকেন্দ্রীক হয়ে থাকে। বিনিয়োগকারীদের কীভাবে আরও নিরলস সেবা দিতে পারে এবং রিয়েল টাইম সলুশন দিতে পারে এ জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
ডিএসই চেয়ারম্যান হাফিজ মোহাম্মদ হাসান বাবু বলেন, ডিএসইকে সর্বপ্রথম শক্তিশালী করতে হবে। ডিএসই পরিচালনার ক্ষেত্রে ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষ্বত্রে একটি সুন্দর সিস্টেম এখানে থাকতে হকবে। আমরা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে দেশের অর্থনীতির সঙ্গে সম্প্রক্ত করতে পারিনি।
তিনি বলেন, আমি মনে করি, দেশের বড় প্রজেক্টগুলোতে পুঁজিবাজার থেকে লোন দেয়া যেতে পারে। যা সারাবিশ্বে উন্নত দেশে হচ্ছে। আমরা লোন বপ্লতে গেলে ব্যাংকিং সেক্টরের দিকে ধাবিত হয়। ব্যাংকিং সেক্টর দেশের অর্থনীতিকে নিঃশ্ব করে দিয়েছে। তাই সেখান থেকে ফিরে এসে আমাদের পুঁজিবাজারমুখী হওয়া প্রয়োজন।
ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, ব্রোকার্সদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তাহলেই পুঁজিবাজার আলো দেখবে। তাই ব্রোকার্সদের উন্নয়নে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। পুঁজিবাজারের উন্নয়ন করতে হলে ট্যাক্সের যে দাবি সেটি নিরসন করতে হবে। আমরা প্রতিমন্ত্রীর মাধ্যমে এই দাবি জানিয়ে রাখি।
বিএসই কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা যদি আমেরিকার কথা ধরি তাহলে সেখানে রবিনহুড যে পরিমাণ ট্রানজেকশন করে পাশের দেশ ভারতে ৫টি ব্রোকারেজ হাউজ ৬০% ট্রানজেকশন করে। কারণ তারা টেকনোলজিকে ডেভেলপমেন্ট করেছে। তারা এখানে যে পরিমাণ ইনভেস্ট করেছে এটাই তাদের এগিয়ে নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আমরা শহর কেন্দ্রীক হয়ে গেছি বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে। এখানে আমরা মনে করি শহরের ধনী মানুষগুলো বিনিয়োগ করবে যা সঠিক নয়। পুঁজিবাজারে সকল স্তরের মানুষের অংশগ্রহণ থাকতে হবে।
শীর্ষ ২০ ব্রোকারেজ হাউজ পুরস্কার পেল যারা:
শেলটেক ব্রোকারেজ, ইবিএল সিকিউরিটিজ, ব্রাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ, লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ এবং ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেড, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেড, আইআইডিএফসি সিকিউরিটিজ, ইউনাইটেড সিকিউরিটিজ, এআইবিএল ক্যাপিটাল মার্কেট সার্ভিসেস, প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ, রয়েল ক্যাপিটাল লিমিটেড, বিডি সান লাইফ সিকিউরিটিজ, ইউনাইটেড ফিনান্সিয়াল কোম্পানি, এফটিবি সিকিউরিটিজ, এনআরবিসি ব্যাংক সিকিউরিটিজ, আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কোম্পানি, ব্যাংক এশিয়া সিকিউরিটিজ, শান্তা সিকিউরিটিজ, সিটি ব্রোকারেজ, এবং আইডিএলসি সিকিউরিটিজ লিমিটেড।
Source: banijjoprotidin