সংকটে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংককে নতুন করে ১ হাজার কোটি টাকা ধার দেওয়া হয়েছে। ১০ শতাংশ সুদে ৯০ দিনের জন্য এ অর্থ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রচলিত পদ্ধতিতে টাকা ধার নেওয়ার জন্য ব্যাংকটির কাছে বন্ড না থাকায় ডিমান্ড প্রমিসরি (ডিপি) নোটের বিপরীতে এ অর্থ দেওয়া হয়েছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে টাকা ছাপিয়ে দিতে হয়। সোমবার কাজটি সম্পন্ন হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, রোববার ন্যাশনাল ব্যাংক তারল্য সহায়তা চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন বিনা জামানতে গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের অনুমোদন নিয়ে এ তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়। এ নিয়ে ব্যাংকটিকে টাকা ছাপিয়ে ৬ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। আগের নেওয়া ধারের অর্থের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ব্যাংক তা পরিশোধ করতে পারেনি। যদিও তিন মাস সময় বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, ঋণের অর্থ থেকে নিজ ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান কোনো পরিচালক ও তাদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ঋণ এবং তাদের নামে বা বেনামে রাখা আমানতের অর্থ পরিশোধ করা যাবে না। এই অর্থ অন্য ব্যাংকে আন্তঃপ্লেসমেন্ট বা আমানত অথবা সিকিউরিটিজ কেনা যাবে না।
ধারের টাকায় ব্যাংকের বিদ্যমান অন্যান্য দায় ও আন্তঃব্যাংক দায় এবং পরিচালন ব্যয় চালানো যাবে না বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এতে আরো বলা হয়, এই অর্থ দিয়ে লভ্যাংশ দেওয়া যাবে না এবং অপ্রয়োজনীয় ও অতিরঞ্জিত ব্যয় করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া ঋণের অর্থ দিয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ঋণ দেওয়া, এলসির দায় পরিশোধ বা অন্য উদ্দেশ্যে ডলার কেনা এবং অন্য ব্যাংকের ঋণ অধিগ্রহণ করা যাবে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরাসরি টাকা ইস্যুকে ‘মানি প্রিন্টিং’ বা ‘টাকা ছাপানো’ বলা হয়। অবশ্য এই ছাপানোর অর্থ কাগুজে নোট ছেপে ব্যাংকগুলোকে দিচ্ছে তেমন না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে নির্ধারিত পরিমাণ টাকা স্থানান্তর করে। তারা সমপরিমাণ টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিতে পারে। প্রয়োজনে অন্য অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করতে পারে।
নোট ছাপিয়ে দিলে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়ে। যে কারণে টাকা ছাপিয়ে ব্যাংকগুলোকে না দেওয়ার পক্ষে মত দিয়ে আসছেন অর্থনীতিবিদরা।
যদিও ড. আহসান এইচ মনসুর গভর্নরের দায়িত্ব নিয়ে বলেছিলেন, টাকা ছাপিয়ে আর কোনো ব্যাংককে ধার দেওয়া হবে না। তিনি আগের অবস্থান বদলে গত মার্চে জানান, প্রয়োজন হলেই দুর্বল ব্যাংককে টাকা দেওয়া হবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে আবার টাকা ছাপিয়ে সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি সাংঘর্ষিক কি-না জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান আমার দেশকে বলেন, ‘আমরা কোনো ব্যাংক বন্ধ করতে চাই না। এটা ভালো বার্তা নয়। মার্জার আইন করা হয়েছে যাতে দুর্বল ব্যাংকে টিকিয়ে রাখা যায়। আইন বাস্তবায়নের আগে কিছুটা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে যাতে আমানতকারীরা আস্থা না হারায়। বিষয়টি অবশ্যই মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’
ন্যাশনাল ব্যাংকে শুধু টাকা ছাপিয়ে নয় অন্য পন্থায়ও তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এর আগে ব্যাংকটিকে চলতি হিসাবে ঘাটতির ধার ২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা ও গ্যারান্টির ৯৮৫ কোটি টাকা সহায়তা দেওয়া হয়।
দেশের আর্থিক খাতের অতি সমালোচিত সিকদার পরিবার ও এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে নানা আর্থিক অনিয়মের পর গত ৫ আগস্ট দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যাংকটির পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে গঠন করা হয় নতুন পর্ষদ। সেই হিসেবে গত বছরের অর্ধেকটা সময় ব্যাংকটি পরিচালিত হয়েছে পুরোনো পর্ষদের হাতে, আর প্রায় অর্ধেকটা সময় পরিচালিত হয় নবগঠিত পর্ষদের মাধ্যমে। এরপর বছর শেষে বড় ধরনের লোকসানের চিত্র উঠে আসে।
গত বছর শেষে ন্যাশনাল ব্যাংক ১ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা লোকসান করেছে। ২০২৩ সালে ন্যাশনাল ব্যাংকের লোকসানের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ১ বছরের ব্যবধানে লোকসান বেড়েছে ২০৯ কোটি টাকা বা প্রায় ১৪ শতাংশ। এর মধ্যে সর্বোচ্চ লোকসান করেছিল ২০২২ সালে। ওই বছর ব্যাংকটি ৩ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লোকসান করেছিল, যা ছিল দেশের ইতিহাসে কোনো ব্যাংকের একক সর্বোচ্চ লোকসান।
https://www.dailyamardesh.com/business/amdwdxgvcjd44
NBL BB