নীতি সুদহার অপরিবর্তিতত রেখে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানুয়ারি-জুন সময়ের জন্য আগাম মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন।অনুষ্ঠানের শুরুতেই ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমান মুদ্রানীতির ওপর একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন।
বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও মুদ্রানীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা দেশের অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সম্পদ সম্পর্কিত পরিকল্পনা নির্ধারণে সহায়ক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি বছর দুইবার (জানুয়ারি-জুন এবং জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতি ঘোষণা করে। চলতি অর্থবছরের জন্য মূল্যস্ফীতি ৭ থেকে ৮ শতাংশে নামানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যদিও বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি।
নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি আগের মতো রাখা হয়েছে। গত ডিসেম্বরে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.২৮ শতাংশ, আর আগামী জুনের মধ্যে এটি ৯.৮ শতাংশে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, সরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৮.১০ শতাংশে পৌঁছেছিল, এবং নতুন মুদ্রানীতিতে এটি ১৭.৫০ শতাংশে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষণা করেছে যে, নতুন মুদ্রা ছাপিয়ে অর্থ সরবরাহ বাড়ানো হবে না।
রিজার্ভ মানির প্রবৃদ্ধি কমানোর লক্ষ্যও নির্ধারণ করা হয়েছে। গত জুনে এটি ছিল ৭.৯ শতাংশ, এবং ডিসেম্বরে এটি ২ শতাংশে নামানোর লক্ষ্য ঠিক করা হয়। আগামী জুন পর্যন্ত এটি আরও কমিয়ে ১ শতাংশে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যার ঘাটতি ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এই ঘাটতি পূরণে প্রধান ভরসাস্থল হিসেবে ব্যাংক খাত বেছে নেওয়া হয়েছে, যেখানে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রথমার্ধে মূল্যস্ফীতি, বিনিময় হার স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ বৃদ্ধি চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। জুনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি ঘোষণা না দিয়ে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছিল। এ সময় তৎকালীন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, ব্যাংক খাতে অনিয়মের তথ্য আড়াল করার চেষ্টা করেছিলেন। ৫ আগস্ট পলাতক অবস্থায় তিনি ইমেইলে পদত্যাগ করেন।
বর্তমান গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেওয়ার পর সুদহার বৃদ্ধি করা হয়। তবে, মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে যাওয়ায় আপাতত সুদহার বাড়ানো হবে না। ব্যবসায়ীরা সুদহার কমানোর দাবিতে সরব থাকলেও, সরকার সুদহার বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম ছয় মাসে অর্থনীতি কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকলেও বর্তমানে এটি ২০ বিলিয়ন ডলারে স্থিতিশীল রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৯.৯৪ শতাংশে নেমেছে, যা আগের মাসে ছিল ১০.৮৯ শতাংশ।
এছাড়া, ডলার স্থিতিশীল থাকার খবর পাওয়া গেছে এবং এর দাম ১২২ থেকে ১২৪ টাকার মধ্যে রয়েছে, যা ইতিবাচক প্রবণতা হিসাবে দেখা হচ্ছে।
https://sharenews24.com/article/97784/index.html