ওষুধ শিল্পের নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, ওষুধের দাম বাড়ানোর ব্যর্থতার ফলে বাজারে সম্ভাব্য ঘাটতি হতে পারে এবং ওষুধের গুণমান হ্রাস পেতে পারে।
উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দেশীয় ওষুধ কোম্পানিগুলো সরকারের অনুমতি চায় ওষুধের দাম বাড়ানোর জন্য। ওষুধ শিল্প সমিতির নেতাদের দাবি, ডলার সংকট, বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, এলসি জটিলতা, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় ওষুধের দাম বাড়ানোর বিকল্প নেই।
তবে এ সময়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ওষুধের দাম বাড়ায়নি। ফলে টিকে থাকতে ওষুধের দাম বাড়াতে চায় দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো।
গত বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এসব বিষয় উল্লেখ করে ওষুধের দাম বাড়ানোর দাবি তুলেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের নেতারা। তারা জানান, টাকার অবমূল্যায়ন, ডলার সংকট, জ্বালানি খরচ বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে গত এক বছরে উৎপাদন ব্যয় অন্তত ৩০ শতাংশ বেড়েছে। তা সত্ত্বেও ওষুধের দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ)।
বিষয়টি নিয়ে সালমান এফ রহমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন বলেও জানিয়েছেন।
বিএপিআই-এর নেতারা এরপর স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে।
ওষুধের দাম না বাড়ালে বাজারে ওষুধের সংকট দেখা দেয়া এবং ওষুধের গুণমানে ঘাটতি হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের (বিএপিআই) সাধারণ সম্পাদক এসএম শফিউজ্জামান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন, “আমরা সালমান এফ রহমানকে বলেছি দাম না বাড়ালে আমরা আর পারছি না। উনি বলেছেন এ বিষয়ে প্রাইম মিনিস্টারের সাথে কথা বলবেন। তবে তিনি দাম বাড়ানোর বিষয়ে কিছু নিশ্চিত করেননি।”
তিনি বলেন, ”ডলার প্রাইস দীর্ঘদিন ছিল ৮৪টাকা ছিল। এখন সেটি হয়েছে ১৩০ টাকা। টাকা বেশি দিলেও ১০০% এলসি করা যায় না। সব দিক থেকে ঝামেলা। নতুন সরকারকে দাম বাড়াতে বললে সরকার আমাদের প্রেশার দিবে আবার বাজারে ওষুধ পাওয়া না গেলেও প্রেশার দিবে।”
তিনি আরো বলেন, “৬ মাস ধরে ডলারের দাম বেশি যার কারণে বেশি দাম দিয়ে কাঁচামাল আনতে হচ্ছে। দাম বাড়ানোর বিষয়ে আমরা লিখিত কোন প্রস্তাব দেইনি। মুখে মুখে বলেছি আমাদের অনেক বিপদ। নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ব্যস্ততা কমলে আমরা তার কাছেও যাবো।”
এখন বাজারে ওষুধের কোন সংকট আছে কিনা জানতে চাইলে এসএম শফিউজ্জামান বলেন, “আমাদের প্রত্যেক কোম্পানির হাতে তিন থেকে চার মাসের কাঁচামাল থাকে। তাই উৎপাদন আসলে কমেনি তবে এভাবে চলতে থাকলে উৎপাদন কমে যাবে, তখন সংকট তৈরি হবে। ওষুধ তো মানুষকে খেতে হবে, তাই সংকট সৃষ্টির আগে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মোট ৩০৮ টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে অ্যালোপ্যাথি ওষুধ তৈরি করে আসছে। দেশে দেড় হাজারেরও বেশি জরুরি ওষুধের ২৭ হাজারেরও বেশি ব্র্যান্ডের ওষুধ উৎপাদন করা হয়। এর মধ্যে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকায় ওষুধ রয়েছে ২১৯টি। তার মধ্যে ১১৭টি ওষুধের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দেয় সরকার। অন্য সব ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করে উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো।
ল্যাবএইড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ এম শামীম টিবিএসকে বলেছেন, “ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতিটি ওষুধের উৎপাদন খরচ ২০-২৫% বেড়ে যাচ্ছে। সেভাবে তো দাম বাড়ছেনা। ডলার এখন পাওয়া যায়না। আগে একবারে এক লাখ ডলার এলসি করা যেতো। এখন সেটি চারভাগে করতে হয়। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর দাম না বাড়ালে ওষুধের দাম বাড়ানো যায় না। সে কারণে দাম বাড়েনি কিন্তু কিছু কিছু ওষুধের পরিমাণ কম বাজারে। ওষুধের দাম না বাড়ালে কোম্পানিগুলো কোয়ালিটি কম্প্রোমাইজ করতে বাধ্য হবে। বাজারে ওষুধের ক্রাইসিসও তৈরি হবে।”
তিনি বলেন, “ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া দাম বাড়ানো সম্ভব না। কিন্তু বৈশ্বিক বাজারে দাম স্থির থাকলে প্রতিষ্ঠানগুলো গুণমানের সঙ্গে আপস করতে বাধ্য হতে পারে এবং বাজারে ওষুধের সংকট দেখা দিতে পারে।”
ডা: এ এম শামীম জানিয়েছেন, ল্যাবএইডে গত বছরের আগেও যেখানে মার্জিনাল লাভে ছিল সেখানে মার্জিনাল লস হয়েছে। “২০২১-২২ অর্থবছরে আমরা ১৬-১৭ কোটি টাকা আমরা প্রফিট করেছি। অথচ উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় গত বছর ল্যাবএইড ফার্মাসিটিক্যালসের ১৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।”
ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মুক্তাদির জানান, দাম না বাড়ালে ওষুধ কোম্পানিগুলোর টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।
২০২২ সালে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় ব্যবহৃত ৫৩টি প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম বাড়িয়েছে। তখন কিছু ওষুধের দাম ১৩ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছিলো। তবে তাতেও ওষুধ কোম্পানিগুলোর লোকসান হচ্ছে বলে দাবি করছেন উদ্যোক্তারা।
কোম্পানিগুলোর নতুন দাবি নিয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মুখপাত্র নুরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেছেন, শিল্প সমিতির নেতারা সালমান এফ রহমানের সাথে বৈঠক করেছে সে ব্যাপারে তারা অবগত আছেন। তবে সমিতি বা উপদেষ্টার পক্ষ থেকে কোন লিখিত আবেদন এখনো ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছে দেওয়া হয়নি। লিখিত আবেদন আসলে দাম বৃদ্ধির সরকারি যে প্রক্রিয়া আছে তা অনুসরণ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, “ব্যবসায়ীরা দাবি করছে ডলার ক্রাইসিসসহ বিভিন্ন কারণে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে, তা কতটা যৌক্তিক আমাদের কমিটি সেসব যাচাই-বাছাই করবে।”
source: tbsnews.net
osudh sholpo dam briddhi medicine sector price hike