পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত আইটি খাতের কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড (GENEXIL) ঢাকা ও চট্রগ্রামে ইএফডি (ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস) ও এসডিসি (সেলস ডাটা কন্ট্রোলার) মেশিন বসিয়ে ভ্যাট আদায় করবে। আদায়কৃত ভ্যাটের একটি অংশ কমিশন হিসেবে পাবে কোম্পানিটি।
জানা গেছে মূসক ও সম্পূরক শুল্ক সুষ্ঠুভাবে সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ইএফডি/এসডিসি যন্ত্রস্থাপনের বিধিমালা জারি করে আদেশ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। দরপত্রের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠান জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড((GENEXIL) দেশব্যাপী এসব যন্ত্র স্থাপন করবে।
জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড আগামী পাঁচ বছরে ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিনা মূল্যে তিন লাখ ইএফডি (ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস) ও এসডিসি (সেলস ডাটা কন্ট্রোলার) যন্ত্র স্থাপন করবে, এসব যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণও তারা করবে।
এসব যন্ত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনবিআরের সার্ভারে বিক্রয়ের তথ্য–উপাত্ত পাঠিয়ে দেবে। একইসঙ্গে খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতাদের এই যন্ত্র ব্যবহারে উৎসাহিত করবে জেনেক্স। তারা বিনামূল্যে এসব যন্ত্র সরবরাহ করবে। তবে এর মাধ্যমে যে ভ্যাট আদায় হবে, তার একটি অংশ কমিশন হিসেবে পাবে কোম্পানিটি।
এনবিআরের সাধারণ আদেশে বলা হয়েছে, দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী নির্বাচিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেবে জেনেক্স। শুধু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাই নন, সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটের কর্মকর্তাদেরও প্রশিক্ষণ দেবে জেনেক্স।
ইএফডি/এসডিসি স্থাপনের পর এ–সংক্রান্ত তথ্য সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটে পাঠাবে জেনেক্স। এছাড়া সংশ্লিষ্ট কমিশনার প্রতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যে আগের মাসে যেসব প্রতিষ্ঠানেইএফডি/এসডিসি স্থাপন করা হয়েছে, তার হালনাগাদ তালিকা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পাঠাবে।
দেড় দশক ধরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মূসক সংগ্রহ আধুনিকায়নের চেষ্টা করছে। মূলত ভ্যাট আদায় বাড়ানোর লক্ষ্যে তারা এ কাজ করছে। ২০০৭–০৮ সালে ইলেকট্রনিক ক্যাশরেজিস্টার (ইসিআর) চালুর চেষ্টা করে এনবিআর, কিন্তু এই উদ্যোগ ব্যবসায়ীদের মধ্যে তেমনসাড়া ফেলতে পারেনি।
ইসিআর প্রচলনের কয়েক বছর পর এ–সংক্রান্ত সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। মূলত প্রয়োগের ক্ষেত্রেসীমাবদ্ধতা এবং রাজস্ব কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের অবৈধ যোগসাজশের কারণে এই উদ্যোগসফল হয়নি বলে অভিযোগ।
অন্যদিকে ইসিআরগুলো এনবিআরের কেন্দ্রীয় সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। সে কারণেব্যবসায়ীরা তাঁদের প্রকৃত লেনদেনের তথ্য প্রকাশ করছেন কি না, তা যাচাই করার উপায় ছিলনা।
ইসিআরের ব্যর্থতার পর ২০১৭ সালে ইএফডি বসানোর উদ্যোগ নেয় এনবিআর। ২০১৮সালের ডিসেম্বরে এই প্রযুক্তি কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করে এনবিআর।
২০১৯ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে ১০০ মেশিন বসানো হয়। পরের চারবছরে সব মিলিয়ে ১০ হাজারের মতো মেশিন বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বসেছে। এসব মেশিনের দাম ২০–২২ হাজার টাকা। তাই এই বাড়তি খরচের কারণে ব্যবসায়ীরা মেশিনবসাতে আগ্রহ দেখান না। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রায় তিন লাখ প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে।
সেই অভিজ্ঞতা থেকে গত অর্থবছরের শুরুতে এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ নতুন উদ্যোগ নেয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানকেআগামী পাঁচ বছরে তিন লাখ ইএফডি বসানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়, যা বাস্তবায়নে সাধারণ আদেশ দিয়েছে এনবিআর। জেনেক্স বিনা মূল্যে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানে ইএফডি মেশিন বসাবে, বিনিময়ে কোম্পানিটি প্রতি ১০০ টাকা ভ্যাটে ৫২ পয়সা কমিশন হিসেবে পাবে।
গত ২২ শে আগস্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূল্য সংযোজন কর–মূসক বা ভ্যাট আদায়ের নতুন এই পদ্ধতি উদ্বোধন করা হয়। ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস বা ইএফডি সিস্টেমের ফলে ভ্যাট আদায় নিয়ে অস্বচ্ছতা কেটে যাবে বলে দাবি করছেন কর্মকর্তারা। জেনেক্স–এনবিআরের অংশীদারির ভিত্তিতে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ইএফডিএমএস) চালু করা হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন, ক্রেতাদের মাঝে পণ্য কিনে ভ্যাট চালান না নেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। পণ্য কিনে ভাউচার নিলে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে দায়বদ্ধতা তৈরি হয়। তাতে এনবিআরেরও ভ্যাট আদায়ে সুবিধা হয়।ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উদ্যাপন উপলক্ষে গতকাল বুধবার(০৬ ডিসেম্বর ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
এনবিআর জানিয়েছে, ১০ ডিসেম্বর ভ্যাট দিবস এবং ১০-১৫ ডিসেম্বর ভ্যাট সপ্তাহ পালন করা হবে। এ বছর ভ্যাট দিবসের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘আমার ভ্যাট আমি দেব, কেনার সময় চালান নেব।
যেসব জায়গায় রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি রয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে উন্নতির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, সরকারের মোট রাজস্বের ৮৬ শতাংশ আহরণ করে এনবিআর। আর এনবিআরের মোট রাজস্বের ৩৮ শতাংশই আসে ভ্যাট বা মূসক (মূল্য সংযোজন কর) থেকে। ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায় আরও বাড়াতে এনবিআর কাজ করছে। এ জন্য ভ্যাট বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো দরকার। তিনি ক্রেতাদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা পণ্য কেনার সময় চালান নিয়ে ভ্যাট আদায়ে সহযোগিতা করুন।
সংবাদ সম্মেলনে এনবিআরের সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন) মইনুল খান বলেন, কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়ার কারণে রাজস্ব কমেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ আমদানি কমেছে। তবে কিছু কৌশল অবলম্বন করে ভ্যাট আদায় বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। এ কারণে ভ্যাট আদায়ে গত নভেম্বর পর্যন্ত ১৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
মইনুল খান আরও বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে ইএফডি মেশিন বেশ কার্যকর। এ জন্য খুচরা পর্যায়ে দ্রুত ইএফডি মেশিন বসানোর লক্ষ্য রয়েছে এনবিআরের। জেলা-উপজেলা পর্যায়েও ইএফডি মেশিন বসানো হবে বলে জানান তিনি।
source: dhakasharebazar.com
genex infosys GENEXIL government tax collect profit