March 10, 2025 3:48 am
March 10, 2025 3:48 am
Home Stock Market ইউনাটেড পাওয়ারের বিশেষ সুবিধা বাতিল

ইউনাটেড পাওয়ারের বিশেষ সুবিধা বাতিল

by fstcap

ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডকে (ইউপিজিডি) বিগত সরকারের দেওয়া আইপিপি রেটে গ্যাস সরবরাহের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে সরকার। ফলে এখন থেকে ক্যাপটিভ রেটে বিল পরিশোধ করতে হবে কোম্পানিটিকে। দীর্ঘ দিন ধরে এই সুবিধা ভোগ করে আসছিল আওয়ামী লীগ আমলে বিদ্যুৎ খাতের প্রভাবশালী এই কোম্পানি। শুধু তাই নয়, কোম্পানিটি

একদিকে আইপিপি রেট বা অর্ধেক দামে সরকারের গ্যাস ব্যবহার করে লাভবান হয়েছে, আরেক দিকে আইন ও চুক্তি ভঙ্গ করে ইপিজেডের বাইরে বিদ্যুৎ বিক্রি অতিরিক্ত হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এর পরও কোম্পানিটির কাছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বকেয়া গ্যাস বিল পাবে সরকার। এ অবস্থায় বকেয়া আদায়েও জোর দিয়েছে সরকার।

জ¦ালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এতদিন ধরে ইউনাইটেড পাওয়ার ঢাকা ইপিজেড এলাকায় ১০০ মেগাওয়াট এবং চট্টগ্রাম ইপিজেডে অবস্থিত ৭২ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ক্যাপটিভ গ্রাহক শ্রেণির জন্য প্রযোজ্য গ্যাস আইপিপি দামে পেয়ে আসছিল। তবে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ গ্যাস আইন ২০১০ এর আলোকে এই সুবিধা প্রাপ্তির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। এ ছাড়া আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে বিষয়টি অবহিত করে মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে আইপিপি রেটে বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটিতে গ্যাস সরবরাহের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে বলে জ¦ালানি বিভাগ। এর ধারাবাহিকতায় গত ২ মার্চ থেকে দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আইপিপি মূল্যে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করে সরকার।

সূত্র জানায়, আদালত ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাস বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্তটি ইউনাইটেড গ্রুপকে চিঠি দিয়ে অবহিত করে। একই সঙ্গে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ইউনাইটেড বকেয়া গ্যাস বিল পরিশোধ না করলে বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটিতে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুশিয়ারি দেওয়া হয়। তিতাস থেকে ইউনাইটেডকে দেওয়া এই চিঠির সূত্রে আরও জানা যায়, এর আগে তিতাস বেশ কয়েকবার ইউনাইটেডকে বিল পরিশোধের নোটিশ করলেও কার্যত তারা গুরুত্ব দেয়নি। গত সেপ্টেম্বরেও তিতাস থেকে ইউনাইটেড পাওয়ারকে দ্রুত বকেয়া ৪৮১ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য চিঠি দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজকে আমাদের সময়কে বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তিতাস তাদের কাছে ৪৮১ কোটি টাকা বিল পাবে। তিতাস দফায় দফায় তাদের চিঠি দিলেও তারা বিল পরিশোধ করছে না। এখন আইন অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তবে বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি বিস্তারিত জানি না। জেনে বলতে পারব।

সূত্র জানায়, গত ২ মার্চ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অপারেশন-৪ শাখার উপসচিব মোহাম্মদ রুবায়েত খান স্বাক্ষরিত ‘ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডকে (ইউপিজিডি) আইপিপি রেটে গ্যাস সরবরাহের সিদ্ধান্ত বাতিলের পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাপাটিভ রেটে গ্যাস বিল প্রদান ও আদায়’ শিরোনামে চিঠি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টার দপ্তর, জ্বালানি সচিব, তিতাস গ্যাস ও কর্ণফুলী গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে পাঠানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, ইউনাইটেডকে আইপিপি রেটে সরবরাহের বিষয়টি গ্যাস আইন-২০১০ এবং এ বিষয়ে আদালত কর্তৃক প্রদত্ত আদেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই ২০২৩ সালের ১৫ অক্টোবর বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইউনাইটেড পাওয়ার, তিতাস গ্যাস ও কর্ণফুলী গ্যাসের মধ্যকার গ্রাহক শ্রেণি ও ট্যারিফ নির্ধারণবিষয়ক সিদ্ধান্ত বাতিল করা হলো।

এর আগে অন্তর্বর্তী সরকার যেসব আইপিপি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে এবং অদূর ভবিষ্যতে শেষ হবে- সেগুলো চালু রাখার জন্য পিডিবি ও পিজিবিকে যৌথভাবে খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়। এ লক্ষ্যে গত ১৩ নভেম্বর একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি আইপিপিসমূহের বিদ্যমান চুক্তি, ট্যারিফ এবং উৎপাদন ব্যয় পর্যালোচনাক্রমে বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য দক্ষ ও সাশ্রয়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রসমূহ চিহ্নিত করে। এই পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি বিদ্যমান আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী ইউনাইটেডের বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটির গ্যাসের মূল্য পুনর্নির্ধারণের জন্য সুপারিশ করে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা। পরে গত ২৯ জানূয়ারি বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার সম্মতির পাঠানো হয়। জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার এ সংক্রান্ত অনুমোদন দিয়েছেন। তারপরই জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে আইপিপি রেটে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

যেভাবে সুবিধা পায় ইউনাইটেড : বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ইউনাইটেড গ্রুপ ২০২৩ সালে সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে এই দুটি কেন্দ্রের গ্যাসের বিল ক্যাপটিভ শ্রেণির পরিবর্তে আইপিপি মূল্যে দেওয়ার আদেশ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে চাপ দিয়ে করে নেয়।

বেসরকারি খাতের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুটি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ যেহেতু সরকারের কাছে বিক্রি করা হয় না, সে কারণে ক্যাপটিভ বিবেচনায় গ্যাসের দাম ঘনমিটারপ্রতি ৩১ টাকা নির্ধারণ করে বিইআরসি। একই সময়ে আইপিপির জন্য গ্যাসের দর ছিল ১৭ টাকা। ইউনাটেড আইপিপি দামে গ্যাস পেতে তদবির শুরু করে। এই নিয়ে বেশ কয়েকবার বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিইআরসির মধ্যে চিঠি চালাচালি শুরু হয়। আইপিপি দামে গ্যাস দিতে তৎকালীন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিইআরসিকে চাপও দেন। তবে বিইআরসির তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল পরিষ্কার জানিয়ে দেন, আইনে কোনোভাবেই আইপিপি হিসেবে বিবেচনার করার কোনো সুযোগ নেই। তাই ক্যাপটিভের দরেই তাদের গ্যাসের মূল্য দিতে হবে। তবে শেষ পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রীর চাপের কারণে ইউপিজিডিকে বাণিজ্যিক লাইসেন্স শর্ত পরিবর্তন করে নবায়ন করতে বাধ্য হয় বিইআরসি। গত বছরের ২৩ নভেম্বর লাইসেন্স নবায়ন করা হয়। লাইসেন্সে যে শর্ত পরিবর্তন করা হয়, তা হলো যেটুকু বিদ্যুৎ ইপিজেডে সরবরাহ করবে তার গ্যাসের বিল হবে ক্যাপটিভ রেটে ৩১ টাকা। আর যেটুকু বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে দেবে ততটুকু বিদ্যুতের গ্যাসের বিল হবে আইপিপি রেটে ১৭ টাকা। বিইআরসির সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদ্যুৎ কেন্দ্রে লাইসেন্স দেয় বিইআরসি। কিন্তু কোন ধরনের লাইসেন্স দেবে, তা নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়। তৎকালীন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশ ও চাপে লাইসেন্সের শর্ত পাল্টানো হয়।

জানা গেছে, চট্টগ্রামে ইপিজেডে অবস্থিত ৭২ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের পুরোটাই ইপিজিডেই সরবরাহ করা হয়। বাইরে বিক্রি করা হয় না। তবে ঢাকা ইপিজেডে অবস্থিত ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে ইপিজেডের বাইরে বিদ্যুৎ বিক্রি করা হয়। জানা গেছে, ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ বিদ্যুৎ ডিইপিজেডের বাইরে বিক্রি করে ইউনাইটেড। এই হিসাবে ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাইরে বিক্রি করা হয়।

বিইআরসি নির্ধারিত বাণিজ্যিক বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ১২ টাকা। ১৫ মেগাওয়াটকে কিলোওয়াট (ইউনিট) এর রূপান্তর করলে ঘণ্টায় ১৫ হাজার কিলোওয়াট হয়। আর একদিনে হয় ৩ লাখ ৬০ হাজার ইউনিট। মাসে দাঁড়ায় ১ কোটি ৮ লাখ ইউনিট। সরকারি দাম প্রতি ইউনিটের দাম ১২ টাকা করে হিসাব করলে মাসে ১২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। বছরে দাঁড়ায় ১৫৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে হিসাব করলে টাকার অংকে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৩৩ কোটি ১২ লাখ টাকা। তবে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সরকারি দরের চাইতে অন্তত ৫-৬ টাকা বেশি দামে বিদ্যুৎ বাইরে বিক্রি করছে ইউনাইটেড। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ছয় বছরে সরকারের গ্যাস ব্যবহার করে আইন ভেঙে বাইরে বিদ্যুৎ বিক্রি করে হাজার কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে কোম্পানিটি।

এদিকে ইউনাইটেড থেকে বকেয়া বিল আদায় করতে শিগগির কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। কোম্পানটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত গ্যাসের বকেয়া বিলের পরিমাণ ৪৮১ কোটি ১৭ লাখ ৭৬ হাজার ৫৯৩ টাকা। এই টাকার জন্য বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও পরিশোধ করছে না ইউনাইটেড। এই অবস্থায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে দেওয়া এক চিঠিতে শিগগির বিল পরিশোধ না করলে কেন্দ্র দুটিতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
https://www.dainikamadershomoy.com/details/01956cbcb51f16

UPGDCL

You may also like