Home Banking আরো তীব্র হয়েছে ব্যাংকগুলোর ডলার সংকট

আরো তীব্র হয়েছে ব্যাংকগুলোর ডলার সংকট

by fstcap

চলতি মাসে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ব্যাংকের মাধ্যমে বেশি রেমিট্যান্স আসছে। রফতানি আয়ও প্রবৃদ্ধির ধারায়। এর পরও দেশের ব্যাংকগুলোয় ডলারের সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে

চলতি মাসে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ব্যাংকের মাধ্যমে বেশি রেমিট্যান্স আসছে। রফতানি আয়ও প্রবৃদ্ধির ধারায়। এর পরও দেশের ব্যাংকগুলোয় ডলারের সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাড়তি দামে রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে বেশির ভাগ ব্যাংক। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকের পাশাপাশি কার্ব মার্কেটেও (খুচরা বাজার) ডলারের বিনিময় হার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে। গতকাল এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোয় প্রতি ডলার ১২৯ টাকায়ও কেনাবেচা হয়েছে।

চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিদেশী হিসাবে (নস্ট্র অ্যাকাউন্ট) ডলার স্থিতি কমে এসেছে। চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকগুলোর বিদেশী হিসাবে স্থিতির পরিমাণ ছিল ৬১০ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। ধারাবাহিকভাবে কমে নভেম্বর শেষে তা ৪৩৮ কোটি ৩৮ লাখ ডলারে নেমে এসেছে। সে হিসাবে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে ১৭১ কোটি ৯৫ লাখ ডলার বা ২৮ দশমিক ১৭ শতাংশ।

ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় এলসি দায় সমন্বয় ও বিদেশী ঋণ পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে দেশের ব্যাংকগুলো। গত রোববার সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে ইস্যু করা একটি চিঠিতে এ ডলার সংকটের বিষয়টি উঠে আসে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির সবক’টি এডি শাখার (বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের অনুমোদনপ্রাপ্ত শাখা) ব্যবস্থাপকের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের সর্বোচ্চ বিনিময় হার ১২০ টাকা নির্ধারণ করলেও এ দরে কোথায়ও ডলার মিলছে না। আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার কিংবা এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো থেকে এ দরে কেনা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকও রিজার্ভ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। ফলে সোনালী ব্যাংকের আমদানি বিলের মূল্য পরিশোধ বা আউটওয়ার্ড রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে ডলারের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থায় গ্রাহকদের ডলারের বাজারদর অবহিত করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’

অথচ তিন বছর ধরে ডলারের বাজার স্থিতিশীল করার কথা বলে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথমে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা হয়। এরপর ধীরে ধীরে অবমূল্যায়ন ঘটানো হয় টাকার। নিয়ন্ত্রিত কোনো পদ্ধতিই কাজ না করায় শুরু হয় ‘ক্রলিং পেগ’ নীতির বাস্তবায়ন। কিন্তু এ সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো নীতিই ডলারের বাজারকে স্থিতিশীল করতে পারেনি। প্রায় ৫০ শতাংশ অবমূল্যায়নের পরও পতন থামেনি টাকার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলারের বিনিময় হারকে স্থিতিশীল করতে গত তিন বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া সব নীতিই ছিল ভুল। রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি না করে ২০২২ সালেই যদি বিনিময় হারকে বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হতো তাহলে টাকার এতটা অবমূল্যায়ন ঘটত না। দেশের রিজার্ভও শক্তিশালী অবস্থানে থাকত। মূল্যস্ফীতিও এ মাত্রায় পৌঁছে মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলত না। ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকার ও তার আমলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেয়া ভুল নীতির খেসারত দিচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে দেশের একটি বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিনিময় হার নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগে দেশে অবৈধ হুন্ডির বড় বাজার তৈরি হয়ে গেছে। বাজারটি এখন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অত্যন্ত শক্তিশালী। অনেক ব্যবসায়ীই নামমাত্র মূল্যে আমদানির এলসি খুলে বাকি অর্থ হুন্ডিতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এ কারণে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের বড় একটি অংশ হুন্ডির বাজারে চলে যাচ্ছে। এমনকি উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও টিউশন ফির মতো বৈধ লেনদেনও এখন হুন্ডিতে হচ্ছে। হুন্ডির বিরুদ্ধে শক্তিশালী পদক্ষেপ নেয়া না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।’

ডলারের বিরাজমান সংকটের সূত্রপাত ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে। ওই মাসে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমদানি দায় ও বিদেশী ঋণ পরিশোধের জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির এ প্রক্রিয়া চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এ সময়ে রিজার্ভ থেকে বাজারে বিক্রি করা হয়েছে প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলার। এত পরিমাণ ডলার বিক্রির পরও বাজার স্থিতিশীল করতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০২২ সালের শুরুতে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ৮৫ টাকা থাকলেও সেটি রোববার ১২৯ টাকায়ও লেনদেন হয়েছে। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রলিং পেগ নীতিকে আমলে নিলে ১২০ টাকার বেশি দরে ডলার বেচাকেনার কোনো সুযোগ ছিল না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে গতকাল ব্যাংক খাতে ডলারের বিনিময় হার কিছুটা কমেছে।

বাজার স্থিতিশীল করতে ব্যর্থ হয়ে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণের দায়িত্ব ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) হাতে ছেড়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর সংগঠন দুটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে ডলারের বিভিন্ন দর ঘোষণা করা হয়। যদিও কোনো দরই দেশের ব্যাংক খাতে কার্যকর হতে দেখা যায়নি। এরপর চলতি বছরের মে মাসে বিনিময় হার নির্ধারণে দেশে ‘ক্রলিং পেগ’ নীতি চালু করা হয়।

এ নীতি চালুতে সে সময় বেশ তৎপরতা দেখিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। এক্ষেত্রে সুপারিশ ছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলেরও (আইএমএফ)। ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালুর সময় ডলারের দর এক ধাক্কায় ১১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১১৮ টাকা পর্যন্ত ওঠার সুযোগ দেয়া হয়। আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর এ দর আরো বাড়িয়ে ১২০ টাকায় উন্নীত করা হয়।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিনিময় হার স্থিতিশীল করতে এ নীতি কোনো কাজেই আসেনি। বরং দেশের মুদ্রাকে আরো বেশি অবমূল্যায়নের দিকে ঠেলে দিতেই বেশি ভূমিকা রেখেছে। এ অবস্থায় ‘ক্রলিং পেগ’ নীতি থেকেও সরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিনিময় হার নিয়ে বাংলাদেশে এখন যেটি হচ্ছে সেটি অতীতের ভুল নীতির ফল বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘ডলারের দরকে বাজারের ওপর ছেড়ে না দিয়ে ধরে রাখা হয়েছিল। এ কারণে দেশের রিজার্ভের ক্ষয় হয়েছে, টাকার রেকর্ড অবমূল্যায়ন ঘটেছে, মূল্যস্ফীতি উসকে উঠেছে। ভুল নীতির কারণে দেশের মানুষ ও অর্থনীতি বিপদে পড়েছে।’

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক এ প্রধান অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি না করে বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে সাময়িকভাবে দর বাড়ত। কিন্তু ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে দর সংশোধন হতো। বাংলাদেশ ব্যাংককে এখন অতীতের বকেয়া এলসি দায়সহ অন্যান্য দায়ও পরিশোধ করতে হচ্ছে। পাশাপাশি ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের এলসি খোলা বাড়ছে। এ কারণে ডলারের চাহিদা বাড়ছে। তবে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধির কারণে ডলারের জোগানও বেড়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইএমএফসহ দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ২-৩ বিলিয়ন ডলার ঋণসহায়তা পাওয়া যাবে। এসব ডলার যোগ হলে সংকট অনেকাংশেই কেটে যাবে। এজন্য ক্রলিং পেগ নীতি থেকে বেরিয়ে ডলারকে বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া দরকার।’

অর্থনৈতিক সংকটের মুহূর্তে ক্রলিং পেগ নীতি অনুসরণ করে বিশ্বের কোনো দেশই এখন পর্যন্ত সাফল্য পায়নি। বরং তা প্রয়োগ করতে গিয়ে অনেক দেশের মুদ্রা ব্যবস্থাপনাই ঝুঁকির মুখে পড়েছে। যদিও ক্রলিং পেগ নীতি চালুর আগে এটি অনুসরণের মাধ্যমে ডলার সংকট কেটে যাবে বলে সে সময় বারবার জোর দিয়ে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিশ্বের বৃহৎ ও সুপ্রতিষ্ঠিত অর্থনীতির কোনো দেশেই বিনিময় হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে এখন ক্রলিং পেগের চর্চা নেই। নিকারাগুয়া, বতসোয়ানা, একুয়েডর, উরুগুয়ে, কোস্টারিকা, ভিয়েতনাম, আর্জেন্টিনাসহ কিছু দেশ কেবল এ নীতি অনুসরণ করছে। এরই মধ্যে আবার অনেক দেশ এটি থেকে বের হয়েও এসেছে। গত বছরের শেষের দিকে এ নীতি অনুসরণের ঘোষণা দেয় নাইজেরিয়া। দেশটিও খুব একটা সফলতার দেখা পায়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ক্রলিং পেগ নীতি অনুসরণের আলোচনা তোলা হলে দেশের অন্য অর্থনীতিবিদদের পাশাপাশি ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও ড. আহসান এইচ মনসুরও এ নীতির বিরোধিতা করেছিলেন। ওই সময় তারা বণিক বার্তাকে বলেছিলেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার সময়ে কোনো দেশে ক্রলিং পেগ নীতি অনুসরণ করা হলে সেটির ফল পাওয়া যায়। কিন্তু কোনো দেশের রিজার্ভ দুর্বল হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিনিময় হারের অস্থিরতা বেড়ে গেলে এবং একই সঙ্গে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলমান থাকলে সেখানে এ নীতি কাজ করে না। বরং এটি বিনিময় হারের অস্থিরতাকে আরো উসকে দেয়। পাশাপাশি হুন্ডির বাজারকে আরো বেশি শক্তিশালী করে তুলতে ভূমিকা রাখে।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা পদে দায়িত্ব পালন করছেন। আর ড. আহসান এইচ মনসুর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদে নিযুক্ত রয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ডলারের বিনিময় হার বেঁধে রাখার নীতি মেনে চলা হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকার টাকাকে শক্তিশালী দেখাতে চেয়েছিল। এ কারণে ২০১২ সাল পরবর্তী সময় থেকেই টাকাকে অতিমূল্যায়িত করে রাখা হয়েছিল। অর্থনীতির চাহিদা মেনে ধীরে ধীরে টাকার অবমূল্যায়ন ঘটানোর দরকার হলেও সেটি হয়নি। কিন্তু ২০২২ সাল পরবর্তী সময়ে এসে বাঁধ দিয়ে রেখেও টাকার অবমূল্যায়ন ঠেকানো যায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে দর স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করেও সেটি পারেনি।

তবে গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশে ডলারের বাজার প্রায় স্থিতিশীল হয়ে এসেছিল। ব্যাংকের পাশাপাশি কার্ব মার্কেটেও ডলারের দর ছিল নিম্নমুখী। চাহিদা কমে যাওয়ায় কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ১২১ টাকায় নেমে গিয়েছিল। কিন্তু নভেম্বরের শুরু থেকে ডলারের বিনিময় হার বাড়তে শুরু করেছে। এর আগে ২০২৩ সালের মাঝামাঝিতে দেশে ডলারের বাজার সবচেয়ে বেশি অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছিল। ওই সময় কার্ব মার্কেটে (খুচরা বাজার) প্রতি ডলারের বিনিময় হার ১৩০ টাকা পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল।

২০২২ সালের শুরুতে ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে এতদিনে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যেত বলে মনে করেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘২০২১ সালের শেষের দিক থেকে ডলারের চাহিদা বাড়তে শুরু করে। তখন যদি বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হতো তাহলে ডলারের দর কিছুটা বাড়ত। এতদিনে তা পুরোপুরি স্থিতিশীল হয়ে যাওয়ারও সুযোগ ছিল। বিনিময় হার নিয়ে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কারণেই অর্থনীতি এতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘নানা কারণে বাজারে এখন ডলারের চাহিদা বেড়েছে। রেমিট্যান্সের ডলারের দর ১২৭ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতেও আমি বলব, ক্রলিং পেগ নীতি তুলে দিয়ে বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া দরকার। এতে ডলারের দাম সাময়িক বাড়লেও ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হয়ে যাবে।’

বিনিময় হার স্বাভাবিক করার কথা বলে তিন বছর ধরেই রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে বিক্রি করা হয় ৭৬২ কোটি বা ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা আরো বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়নে। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে বিক্রি করা হয় আরো ১২ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। সব মিলিয়ে গত তিন বছরে রিজার্ভ থেকে প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়।

টানা তিন অর্থবছর ধরে ডলার বিক্রির কারণে রিজার্ভে বড় ধরনের ক্ষয় হয়েছে। ২০২১ সালের আগস্টে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবায়নে)। সে রিজার্ভ কমে এখন ২৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে। তবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী (বিপিএম৬) গতকাল ২৩ ডিসেম্বর রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে নিট রিজার্ভ রয়েছে ১৫ বিলিয়ন ডলারের কম। যদিও আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিট রিজার্ভ ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে হবে। আইএমএফের এ শর্ত পূরণ করতে চলতি মাসের শুরু থেকেই বাজার থেকে ডলার কিনছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাজার থেকে ডলার কেনার কারণে চলতি ডিসেম্বরে এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ বেড়েছে।

ক্রলিং পেগ নীতি ব্যর্থ হওয়ায় বিনিময় হার নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংক এখন বিকল্প পদ্ধতি খুঁজছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিনিময় হার নির্ধারণে ক্রলিং পেগ নীতিটি ছিল একটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা। বর্তমান পরিবেশ-পরিস্থিতির আলোকে নীতির বিকল্প ভাবা হচ্ছে। গভর্নর এখন দেশের বাইরে আছেন। তিনি আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরবেন। তখন এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।’

বাজার স্থিতিশীল করতে ক্রলিং পেগের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ভূমিকা নিরূপণ করা মুশকিল। তবে আগের তুলনায় বাজার কিছুটা হলেও স্থিতিশীল হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি না করে উল্টো কিনছে। আগের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া এলসি দায় ও জ্বালানিসহ অন্যান্য খাতের বিদেশী কোম্পানিগুলোর পাওনাও পরিশোধ করতে হচ্ছে। অর্থনৈতিক বাস্তবতায় আমদানিতে ছাড়ও দিতে হচ্ছে। এসব কারণে ডলারের চাহিদা বেড়েছে।’  https://bonikbarta.com

 

bangladesh bank dollars crisis bd

You may also like