Home Stock Market আরও দুটি চিনিকল চালুর খবরে আখচাষিদের উচ্ছ্বাস

আরও দুটি চিনিকল চালুর খবরে আখচাষিদের উচ্ছ্বাস

by fstcap

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের অধীন বন্ধ থাকা ছয়টি চিনিকলে আখ মাড়াইয়ের কার্যক্রম স্থগিতের আদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। তার মানে, এসব কারখানায় এখন আখ মাড়াই কাজ শুরু করতে আইনগত কোনো বাধা থাকল না।

তবে প্রাথমিক ধাপে সরকার রংপুরের শ্যামপুর চিনিকল এবং দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ চিনিকলের আখ মাড়াই কার্যক্রম শুরু করবে।

পরের দুটি ধাপে গাইবান্ধার রংপুর চিনিকল, পাবনা চিনিকল, কুষ্টিয়া চিনিকল ও পঞ্চগড় চিনিকল চালু করা হবে বলে এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।

 

শিল্প মন্ত্রণালয়ের আফরোজা বেগম পারুল স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) চেয়ারম্যানের কাছে ওই চিঠি পাঠিয়েছেন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, মাড়াই স্থগিতকৃত চিনিকলগুলো পুনরায় লাভজনকভাবে চালুর জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত টাস্কফোর্সের সুপারিশের ভিত্তিতে পর্যাপ্ত আখ প্রাপ্তি সাপেক্ষে প্রথম পর্যায়ে শ্যামপুর ও সেতাবগঞ্জ চিনিকল, দ্বিতীয় পর্যায়ে পঞ্চগড় ও পাবনা চিনিকল এবং তৃতীয় পর্যায়ে কুষ্টিয়া ও রংপুর চিনিকলের মাড়াই কার্যক্রম চালুর লক্ষ্যে স্থগিতাদেশ পুনরায় প্রত্যাহার করা হল।

তবে চলতি মৌসুমে মাড়াই কার্যক্রম শুরুর সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছেন বিএসএফআইসির যুগ্মসচিব এবং পরিচালক (ইক্ষু উন্নয়ন ও গবেষণা) এ টি এম কামরুল ইসলাম তালুকদার।

 

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাড়াই বোধ হয় হবে না এবার। মাড়াই হলে আগামীবার হবে। এগুলো চালু করতে হলে ইক্ষু রোপণ করতে হবে।

“এটা নিয়ে টাস্কফোর্স কাজ করতেছে। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা আসবে। সে মোতাবেক আমরা ব্যবস্থা নিবো।”

দেশে ১৫টি চিনিকল রয়েছে। ২০২০ সালে সরকারি ছয় চিনিকলের উৎপাদন বিনা নোটিশেই স্থগিত করে আওয়ামী লীগ সরকার। তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী এসব কারখানা আধুনিকায়ন করে আবারও উৎপাদনের অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু গত চার বছরেও এসব কারখানা চালু করা হয়নি।

 

৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের শ্রমিক, কৃষক সংগঠন ও বেসরকারি প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে দেয়। প্রথমে এতে চারজন সদস্য ছিলেন। পরে আরো চারজন যুক্ত করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন করপোরেশনের চেয়ারম্যান।

 

গত কয়েক মাস টাস্কফোর্সের সদস্য ও চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের পরিকল্পনা ও প্রকৌশল বিভাগের সঙ্গে কাজ করেন। তারা শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিনিকল পুনরায় চালু করার সুপারিশ করেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর ফলে আগে থেকে চালু থাকা নয়টি চিনিকলের সঙ্গে এই নতুন দুটি যুক্ত হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে টাস্কফোর্সের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বন্ধ কল খুলে দেওয়ার লড়াইয়ে এটি একটি ঐতিহাসিক বিজয়।”

“আমাদের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় আগের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার করে নেয়। প্রথম পর্যায়ে শ্যামপুর-সেতাবগঞ্জ, দ্বিতীয় পর্যায়ে পঞ্চগড়-পাবনা, তৃতীয় পর্যায়ে কুষ্টিয়া-রংপুর চিনিকল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

যেহেতু মিলগুলো চালু করতে অর্থের প্রয়োজন রয়েছে, সে কারণেই ধাপে ধাপে এগুলো চালু করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন।

টাস্কফোর্সের সদস্য অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা ঋতু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে বলেছেন, “যেকোনো কিছু নিয়ে লেগে থাকলে তা হবেই- এই উপলব্ধি অনেক অনেক আনন্দের। অন্তর্বর্তী সরকারের এই পদক্ষেপ নিসন্দেহে অনেক কৃষক ও শ্রমিককে উপকৃত করবে।

“দেশের চিনিশিল্প যেন সামনের দিনে এগিয়ে যায় এই প্রত্যাশা নিয়ে টাস্কফোর্সের সদস্য হিসেবে সামনে আরও পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষায় থাকছি।”

চিনিকল চালুর প্রজ্ঞাপনকে স্বাগত জানিয়ে রংপুরের শ্যামপুর চিনিকলের সহকারী ব্যাবস্থাপক (প্রশাসন) দেবাশীষ রায় বলেন, “এটি আমাদের জন্য খুবই সুখবর। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন এসেছে।”

“তবে কবে থেকে আখ মাড়াই শুরু হবে সেটার ব্যাপারে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। হয়ত ধীরে ধীরে সেগুলো জানা যাবে। আমরা এখনো বীজ বপনের কোনো নির্দেশ পাইনি।”

দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ চিনিকলের সহকারী ব্যবস্থাপক শ্যামল বর্মণ বলেন, “আমাদের এখানে চিঠি এসেছে। আখ মাড়াইয়ের যে স্থগিতাদেশ ছিল সেটি প্রত্যাহার করে দেওয়া হয়েছে।”

তিনি বলেন, “তবে এখনো আখ মাড়াইয়ের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। এবার তো আর আখ বপন করা সম্ভব না। পর্যাপ্ত আখ সংগ্রহ ছাড়া তো মিল চলবে না। আগামী বছর চালু করা যায় কিনা সেটাই দেখার।”

এদিকে মিল চালুর খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন শ্যামপুরের চিনিকলের অন্তর্ভুক্ত আখচাষিরা।

শ্যামপুর সুগার মিল আখ চাষি কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি এবং গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন বলেন, “আমি প্রথমে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে অভিনন্দন জানাই। তিনি অবহেলিত রংপুরের মানুষের জন্য অনেক বড় কাজ করেছেন। এতদিন থেকে আমাদের উত্তরের জেলা রংপুরে একটি মাত্র ভারি শিল্প কারখানা ছিল সেটাও বন্ধ হয়ে গিয়েছি।

“সেটা আজ চালু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাই সরকারকে সব আখচাষিদের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই। এ সিদ্ধান্তে আখচাষিরা খুব খুশি।”

শ্যামপুরের আখচাষি আব্দুল জলিল বলেন, “মিলটা চালু হবে, ভাই আপনাকে কী আর বলবো; ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না আনন্দে। এখন থেকে শ্যামপুরের সবাই আখে লাগবে। এখন দামটা একটু বাড়িয়ে দিলে ভালো লাগবে।”

শ্যামপুর চিনিকলের সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) দেবাশীষ রায় বলেন, “জয়পুরহাট চিনিকলের আওতায় শ্যামপুরে আখ চাষ হচ্ছে। ইক্ষু ক্রয় কেন্দ্রগুলো চালু করে দেওয়া হলে আখ আবাদ বেড়ে যাবে। চিনিকল চালুর বিষয়টি নিয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।”

SHYAMPSUG

You may also like