October 9, 2025 7:39 pm
Home Stock Market আমান কটন ফাইব্রাস: আইপিওতে তোলা অর্থের ৯০ শতাংশই ব্যাংকে এফডিআর

আমান কটন ফাইব্রাস: আইপিওতে তোলা অর্থের ৯০ শতাংশই ব্যাংকে এফডিআর

by fstcap

প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ২০১৮ সালে ৮০ কোটি টাকা মূলধন উত্তোলন করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেড। এ অর্থ তোলার মূল উদ্দেশ্য ছিল কোম্পানিটির কারখানার জন্য নতুন যন্ত্রাংশ ক্রয় ও প্রতিস্থাপন করা এবং ঋণ পরিশোধ ও আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করা। এ অর্থ ব্যয়ে বস্ত্র খাতের কোম্পানিটিকে আইপিও-পরবর্তী এক বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নিয়ে দফায় দফায় সময় বাড়িয়েও ব্যয় সম্পন্ন করতে পারেনি আমান কটন। সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কোম্পানির আইপিও তহবিলের প্রায় ৯০ শতাংশই অব্যবহৃত রয়ে গেছে। আর ওই অব্যবহৃত অর্থ তিনটি ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট (এফডিআর) করে রেখেছে কোম্পানিটি।

 

তথ্য অনুসারে, গত আগস্ট শেষে কোম্পানির আইপিও তহবিল থেকে মোট ব্যয় হয়েছে ৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা, যা উত্তোলিত মোট তহবিলের মাত্র ১০ দশমিক ৩১ শতাংশ। এ সময় পর্যন্ত তহবিলের ৮৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ অব্যবহৃত রয়ে গেছে। অব্যবহৃত অর্থের পরিমাণ ৭১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘কিছু কোম্পানি আছে যারা বাজার থেকে টাকা নিয়ে ব্যবহার না করে বছরের পর বছর ফেলে রাখে। এতে আলটিমেটলি বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। আমার মনে হয়, যেসব কোম্পানি এভাবে বাজার থেকে টাকা নিয়ে সময়মতো ব্যবহার করতে পারে না, সেখানে ব্যবস্থাপনা পর্ষদে সমস্যা আছে। এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের মধ্য থেকে যাদের হাতে বেশি শেয়ার আছে তাদের দু-একজনকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া উচিত বিএসইসির।’

 

আইপিও অনুমোদনকালের প্রসপেক্টাস অনুসারে, আমান কটন ফাইব্রাসের উত্তোলিত অর্থ কেবল নতুন যন্ত্রাংশ ক্রয় ও প্রতিস্থাপন এবং ঋণ পরিশোধ ও আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করার কথা ছিল। তখন এ তহবিলের মোট অর্থের মধ্যে ৬৬ কোটি ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে কোম্পানির নতুন যন্ত্রাংশ ক্রয় ও প্রতিস্থাপনে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত হয়। আর ১০ কোটি ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা দিয়ে কোম্পানির ঋণ পরিশোধ ও বাকি ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা আইপিও খরচ খাতে ব্যয়ের সিদ্ধান্ত হয়।

কোম্পানির ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ১৪তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নিয়ে প্রথমবারের মতো আইপিও তহবিল ব্যয়ে সময় বাড়ানো হয়। এ সময় এ তহবিল ব্যবহারের জন্য সময় দুই বছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের ৫ আগস্ট করার পাশাপাশি ব্যয় পরিকল্পনায়ও কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়। কোম্পানিটি তার ঋণ পরিশোধে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে ৫ কোটি ৩৯ লাখ ৩৪ হাজার ৩৬৫ টাকা ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য এবং ৪ কোটি ৭৬ লাখ ৯০ হাজার ৬৩৫ টাকা ঋণ পরিশোধের জন্য নতুন করে বরাদ্দ নির্ধারণ করে।

 

এরপর কোম্পানিটি আইপিও তহবিল ব্যবহারের জন্য আরও একবার সময় বাড়িয়েছে। ২০২১ সালে কোম্পানির ১৬তম এজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নিয়ে এ তহবিল ব্যবহারের সময় ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সম্প্রতি এ দফার নির্ধাতির সময় শেষ হওয়ায় কোম্পানিটি তহবিল ব্যবহারের জন্য নতুন করে আরও একবার সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ দফায় কোম্পানিটি আইপিও তহবিল ব্যবহারের জন্য ২০২৪ সালের ২০ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আসন্ন ১৮তম এজিএমে এ বিষয়ে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নেয়া হবে।

সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, গত আগস্ট শেষে আইপিও তহবিল থেকে ঋণ পরিশোধ বাবদ বরাদ্দকৃত সম্পূর্ণ অর্থ ব্যবহার সম্পন্ন করেছে কোম্পানিটি। এ ছাড়া আইপিও খরচ খাতের অর্থ থেকে ৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যবহার করেছে, যা এ খাতের জন্য বরাদ্দকৃত মোট অর্থের ৯৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। কিন্তু কোম্পানিটি এখন পর্যন্ত যন্ত্রাংশ ক্রয় ও প্রতিস্থাপন এবং ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের এক টাকাও ব্যয় করেনি।

 

কোম্পানির নিরীক্ষক জি কিবরিয়া অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কোম্পানিটি আগস্টের শেষ দিন পর্যন্ত আইপিও তহবিলের অর্থ ব্যবহার করে কোনো আমদানি কিংবা নির্মাণকাজ করেনি। তবে এ সময় পর্যন্ত কোম্পানিটি তহবিলের অব্যবহৃত অর্থসহ সুদ বাবদ অর্জিত টাকা যোগ করে মোট ৭৩ কোটি টাকা তিনটি ব্যাংকে স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ হিসেবে ফিক্সড ডিপোজিট (এফডিআর) করে রেখেছে। এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডে ৩৮ কোটি টাকা, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডে ১৫ কোটি টাকা এবং কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন পিএলসিতে ২০ কোটি টাকা এফডিআর করেছে।

আইপিওর অর্থ ব্যবহার নিয়ে কোম্পানি সচিব শরিফুল ইসলামকে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়ে সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো সাড়া মেলেনি।

ACFL

You may also like