Home National আইপিওতে আসার আগে বন্ধ জেসন ফার্মাসিউটিক্যাল

আইপিওতে আসার আগে বন্ধ জেসন ফার্মাসিউটিক্যাল

by fstcap

পুঁজিবাজার তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য জেসন ফার্মাসিউটিক্যালকে প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রির অনুমোদন দেয় বিএসইসি। কোম্পানিটি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ২০১৯ সালে প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করেছিল। তখন প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তারা বিনিয়োগকারীদের কাছে এক কোটি দুই লাখ ৫৫ হাজার ৭২৮টি শেয়ার ১৬ টাকা প্রিমিয়ামসহ প্রতি শেয়ার ২৬ টাকায় বিক্রি করে। সেই হিসাবে মোট ৩৫ কোটি ৭৩ লাখ ৫১ হাজার টাকা নেয়। এরপর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। পরে প্রতিষ্ঠানটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পরিচালনা পরিষদের সভায় কোম্পানিটি প্রাইভেট থেকে পাবলিক লিমিটেডে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে অনুযায়ী ২ কোটি ৪০ লাখ সাধারণ শেয়ার ইস্যু করে তা বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১০ টাকা ফেসভ্যালুর প্রতিটি শেয়ারের প্রিমিয়াম ধরা হয় ১৬ টাকা। তাতে প্রতিটি শেয়ারের মূল্য দাঁড়ায় ২৬ টাকায়। এ বিষয়ে বিএসইসির কাছ থেকে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে কোম্পানির শেয়ার বিক্রির অনুমোদন নিয়ে ২০১৯ সালের ১২ জুন ১ কোটি ৩৭ লাখ ৪৪ হাজার ২৭২টি শেয়ার ইস্যু করে। এখান থেকে ৩৫ কোটি ৭৩ লাখ ৫১ হাজার ৭২ টাকা উত্তোলন করে। ১৪ জুলাই ১ কোটি ২ লাখ ৫৫ হাজার ৭২৮ শেয়ার ইস্যু করে ৩৫ কোটি ৭৩ লাখ ৫১ হাজার ৭২ টাকা উত্তোলন করে। ৩০ সেপ্টেম্বর ১৫ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার ইস্যু করে ৩ কোটি ৯৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে। ২০১৮ সালের ১৬ জুলাই আইডিএলসিকে করপোরেট উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তাদের দায়িত্ব ছিল জেসন ফার্মার শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে টাকা সংগ্রহ করা। আইডিএলসি উপদেষ্টা থাকাকালীন প্রাইভেট প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করে ৪০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। পরে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত কোম্পানির ২৯৯তম পরিচালনা পরিষদের সভা থেকে আইপিওর মাধ্যমে টাকা সংগ্রহের সিদ্ধান্ত বন্ধ করা হয়। কভিড মহামারির কারণে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনায় আগ্রহ কমে যাবে; যা শেয়ারের দামে প্রভাব ফেলতে পারেÑএমন কারণ দেখিয়ে আইপিও প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এমন সিদ্ধান্তে জেসন ফার্মার পরিচালক জিনাত সেলিম ও আজরা সেলিম ওই সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ হয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন। এ মামলায় দুই শেয়ারধারী পরিচালক কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং করপোরেট উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান আইডিএলসিসহ ৬১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, কোম্পানি আইনের ২৩৩ ধারা অনুযায়ী জেসন ফার্মার বর্তমান বোর্ডের নানা সিদ্ধান্ত কোম্পানিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। পাশাপাশি কোম্পানির চেয়ারম্যান, এমডি ও ডিরেক্টর তাদের নিজের স্বেচ্ছাচারিতায় কোম্পানির নানা সম্পত্তি তাদের নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করেছে। যেটা কোম্পানি আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ বেআইনি। অভিযুক্ত ৫৭ জন কোম্পানির স্টেকহোল্ডার যারা নতুন ইস্যু করা সাধারণ শেয়ার কিনেছেন প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে। এ মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে আরও রয়েছেনÑআইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টের এমডি, আইডিএলসি সিকিউরিটিজের এমডি, ব্লুচিপ সিকিউরিটিজের এমডি, রোজ সিকিউরিটিজের এমডি। এছাড়া ওয়ান ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ও প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টকে কোম্পানির ঋণদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এসব নাটক বলে অভিহিত করেন।

 

বিনিয়োগকারী মিজানুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ২০১৯ সালে জেসন ফার্মার প্লেসমেন্ট শেয়ার কিনি। কিন্তু পরে এ কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি। অথচ গত ৫ বছরের এক টাকাও বিনিয়োগের বিপরীতে লভ্যাংশ পাইনি। এমনকি প্রতিষ্ঠানটি বাজারে আসবে কি না জানি না। শুনেছি কারখানাটির কার্যক্রম বন্ধ। ওয়ান ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জেসন ফার্মা খেলাপি হয়ে আছে। ফলে বিনিয়োগের টাকা ফেরত নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছি।

এ ব্যাপারে করপোরেট উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টের এমডি রেজা আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, আমরা জেসন ফার্মার প্রাইভেট ইক্যুইটি নিয়ে কাজ করেছি। ইস্যু ব্যবস্থাপনার বিষয়ে কোনো কাজ করিনি। তবে প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা ছিল। আমরাও প্রায় ১৯ লাখ শেয়ার ২৬ টাকায় কিনি। নানা কারণে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারেনি। এছাড়া পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সলিমুল্লাহ ১৬ দিন কারাগারেও ছিলেন। সম্প্রতি তিনি মারা যান। সবমিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ। আর তেজগাঁওয়ে তিন একর জমির ওপর কারখানা আছে, সেই জমিসহ কারখানা বিক্রয় করার একটা প্রক্রিয়া চলছে। এটি হলে ব্যাংকসহ অন্য বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত দেবে বলে উদ্যোক্তা জানান।

জেসন ফার্মার পরিচালক আজরা সেলিম বলেন, প্রতিষ্ঠান এখন বন্ধ। আমিও এখন পরিচালনায় নেই। আর আমি বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী নই।

উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সলিমুল্লাহ প্রাণী খাতের বিভিন্ন ওষুধ বিক্রয়ের মাধ্যমে ব্যবসায়িক ক্যারিয়ার শুরু করেন। এরপর তিনি পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে জেসন গ্রুপ গড়ে তোলেন।

source: sharebiz.net

 

IPO Jayson pharmaceuticals ipo closed 

You may also like