Home Featured সুদ বৃদ্ধি পাওয়ায় বড় লাফ ব্যাংকের আমানতে

সুদ বৃদ্ধি পাওয়ায় বড় লাফ ব্যাংকের আমানতে

by fstcap

নয়-ছয় সুদের সীমা প্রত্যাহারে ব্যাংক আমানতে বেশ গতি ফিরেছে। এমনকি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের মাসগুলোতেও ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে। এর মধ্যে ডিসেম্বর মাসেই ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি আমানত বেড়েছে। যদিও নির্বাচনী ব্যয় মেটানো এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার ভীতি থেকে একই সময়ে ব্যাংক থেকে নগদ টাকা হাতে রাখার প্রবণতাও বেড়েছিল। এর পরও ২০২৩ সালে সার্বিক আমানতে বড় উল্লম্ফন ঘটেছে। সব মিলিয়ে গত বছর ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে প্রায় ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা; প্রবৃদ্ধির হার ১১ শতাংশেরও বেশি, যা গত আড়াই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে সব ব্যাংকেই সমান হারে আমানত বেড়েছে এমনটা নয়। এ কারণে বেশ কিছু ব্যাংক নগদ টাকার সংকটেও ভুগছে, যেগুলো চলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা নিয়ে। মূলত খেলাপি ঋণ ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ঋণ বৃদ্ধি পাওয়া এবং ডলার সংকটের কারণে বাজার থেকে বিপুল অঙ্কের নগদ টাকা উঠে যাওয়ায় এ সংকট কাটছে না। ব্যাংক খাতে আমানত বৃদ্ধির পেছনে বেশ কয়েকটি কারণের কথা বলছেন অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টরা। এসবের মধ্যে রয়েছে- সঞ্চয়পত্রে নানা শর্তারোপ, পুঁজিবাজারের দৈন্যদশা, আমানতে সুদের হার বৃদ্ধি, বেসরকারি বিনিয়োগে মন্দা, ফ্ল্যাট ও প্লটের রেজিস্ট্রেশন ব্যয় বৃদ্ধি এবং বাসায় টাকা রাখার নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি প্রভৃতি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, আমানত বৃদ্ধির মূল কারণ এ খাতে সুদের হার আগের চেয়ে বেড়েছে। এখন তো আর নয়-ছয় সুদের সীমাবদ্ধতা নেই। ফলে ব্যাংকগুলো আমানতে এখন ৬ শতাংশেরও বেশি সুদ দিতে পারছে। আরেকটা কারণ হলো, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। কারণ এ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন বিনিয়োগে উদ্যোক্তাদের আগ্রহ কমে গিয়েছিল। তবে নির্বাচনের পর সেই অনিশ্চয়তা কেটে গেছে। ফলে আগামীতে নতুন বিনিয়োগ বাড়বে।

জানা যায়, বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ঋণের সুদে ৯ শতাংশের সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। তবে ওই সুদহারের সীমা কার্যকর হওয়ার আগেই দেশে মহামারী করোনার আঘাত আসে। ফলে সে সময়ে নিম্ন সুদহারের পরও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ সেভাবে আকৃষ্ট হয়নি। উল্টো ঋণের সুদহার কমায় আমানতের সুদও ব্যাপক হারে কমে যায়। তবে দেরিতে হলেও চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ওই সীমা প্রত্যাহার করে স্মার্ট পদ্ধতিতে সুদহার নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া সেপ্টেম্বরে সুদহারের ব্যবধানের (স্প্রেড) সীমাও তুলে নেওয়া হয়। মূলত উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রা সরবরাহ নীতির আওতায় সব ধরনের ঋণের সুদ বাড়ানোর পথে হাঁটছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই পদ্ধতিতে প্রতি মাসেই ঋণের সুদহার বাড়ছে। এতে বাড়ছে আমানতের সুদও। বর্তমানে কোনো কোনো ব্যাংক আমানতে ৯ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দেওয়া হচ্ছে। আর আমানতের সুদ মূল্যস্ফীতির কাছাকাছি চলে আসায় মানুষ এখন ব্যাংকে টাকা রাখতে আগ্রহী হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, গত জুলাই হতে নতুন পদ্ধতিতে ঋণের সুদহার নির্ধারণ করা হচ্ছে। এরপর ঋণের সঙ্গে আমানতের সুদের হারও বাড়ছে। আবার দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগে ঝুঁকি নেননি। ফলে তাদের টাকা বিনিয়োগে ব্যবহার না হয়ে ব্যাংকে ঢুকতে পারে। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের বাজেটে ফ্ল্যাট ও প্লটের রেজিস্ট্রেশন খরচ বাড়ানো হয়েছে। ফলে মানুষ এসব খাতে টাকা না খাটিয়ে ব্যাংকে এফডিআর করে রাখছেন। অন্যদিকে বাসাবাড়ি ও অফিস-আদালতে নগদ টাকা রাখা নিরাপদ নয়। চুরি-ডাকাতির ঝুঁকি থাকে। ফলে নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেও মানুষ ব্যাংকেই টাকা রাখছেন।

ব্যাংক আমানতে বড় লাফ

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের আমানতের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। এক বছর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এ খাতে আমানতের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। ফলে গত এক বছরে এ খাতে আমানত বেড়েছে প্রায় ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি হার উঠেছে ১১ দশমিক ০৫ শতাংশ। এর মধ্যে ডিসেম্বর মাসেই আমানত বেড়েছে প্রায় ১৩ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। প্রাপ্ত তথ্যাদিতে আরও দেখা যায়, আগের বছর আমানতের গতি ছিল একেবারেই কম। ওই বছর ব্যাংক খাতে আমানত বাড়ে ৭৯ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। যা ছিল ইতিহাসে এযাবৎকালের সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি। অথচ করোনার মধ্যেও ২০২০ ও ২০২১ সালে ব্যাংক খাতে আমানতে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। এর মধ্যে ২০২০ সালে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা, বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সাড়ে ১৩ শতাংশ। আর ২০২১ সালে আমানত বেড়েছিল ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ২১ শতাংশ। এ ছাড়া ২০২১ সালের মে মাসে এ খাতে আমানতে প্রবৃদ্ধি উঠেছিল সর্বোচ্চ ১৪ দশনিক ৪৭ শতাংশ।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ লিমিটেডের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আর্থিক প্রতিবেদন শক্তিশালী করতে ব্যাংকগুলো সাধারণত বছরের শেষদিকে এসে আমানত বৃদ্ধির লক্ষ্যে জোরেশোরে প্রচার চালায়। এবারও সেটা হয়েছে। এ ছাড়া সুদের হার বেড়েছে। ফলে আমানতকারীরা ব্যাংকে সঞ্চয় করাকেই বেছে নিয়েছেন। এতে আমানত বেড়েছে।

নানা ছাড়েও বেড়েছে খেলাপি ঋণ

নানা ছাড় ও সুবিধা অব্যাহত রেখেও বিদায়ী বছরে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমেনি, বরং পুরো বছরে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। ২০২৩ সাল শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা, যা এক বছর আগে ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা।

বেসরকারি ঋণে গতি কম

ব্যাংকে আমানতের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে ঋণের প্রবৃদ্ধিতে গতি ফিরেছে। গত ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৭০ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা, যা ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ছিল ১৪ লাখ ২৬ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা। ফলে গত এক বছরে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ। যদিও ডিসেম্বর পর্যন্ত এ খাতে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৯০ শতাংশ। এর মানে লক্ষ্যমাত্রার নিচে রয়েছে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি। এ জন্য নতুন মুদ্রানীতিতে আগামী জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণের জোগান আরও কমিয়ে নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী জুন পর্যন্ত এ খাতে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ শতাংশ।

নানা শর্তারোপে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ভাটা

চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে কোনো ঋণ পায়নি সরকার। উল্টো এ সময়ে নিট বিক্রির পরিমাণ ঋণাত্মক হয়েছে ৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই ছয় মাসে যত টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে তার চেয়ে ৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা বেশি ভাঙানো হয়েছে।

source: dainikamadershomoy.com

 

munafa briddhi bank profit high bb

You may also like