Home Banking ন্যাশনাল ব্যাংকের দুরবস্থার দায় কার?

ন্যাশনাল ব্যাংকের দুরবস্থার দায় কার?

by fstcap

দেশের প্রথম বেসরকারি ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড-এনবিএলের যেই দুর্দশা মঙ্গলবার সমকালের শীর্ষ প্রতিবেদনে উঠিয়া আসিয়াছে, উহা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। এনবিএলসহ ১৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংক বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকিতে রহিয়াছে।

যেই পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংকে ‘পর্যবেক্ষক’ যথেষ্ট হয় নাই বলিয়া ‘সমন্বয়ক’ বসাইতে হইয়াছে, সেইগুলির মধ্যে প্রথম। কিন্তু ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের নিকট প্রেরিত খোদ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদনে যেই চিত্র উঠিয়া আসিয়াছে, তাহা হিমশৈলের দৃশ্যমান চূড়া মাত্র। যদিও মোট দায়ের ১৭ শতাংশ বিধিবদ্ধ তারল্য হিসাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাখিতে হয়; এনবিএল একাদিক্রমে ১৪ মাস সেই নিয়ম প্রতিপালনে ব্যর্থ হইয়াছে। এমনকি জরিমানার ৩৩৭ কোটি টাকা পরিশোধেও অক্ষম। ঋণ-আমানত অনুপাত যেইখানে সর্বোচ্চ ৮৭ শতাংশ থাকিবার কথা, ব্যাংকটিতে উহা শতভাগ অতিক্রম করিয়া গিয়াছে। ফলে অন্যান্য ব্যাংক আর ধারও দিতে চাহিতেছে না। আমাদের প্রশ্ন, ব্যাংকটিতে সংকটের অবশিষ্ট কী রহিল?

 

আমরা দেখিতেছি, সম্পূর্ণ বাংলাদেশি নাগরিকের যৌথ মালিকানায় ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এনবিএল ২০০৯ সালে বহুল আলোচিত সিকদার পরিবারের কর্তৃত্বে যাইবার পর হইতে ক্রমেই দুর্বল হইয়া পড়িয়াছে। বিশেষত ২০২১ সালে পরিবারটির পিতৃব্যক্তিত্ব জয়নুল হক সিকদারের প্রয়াণের পর যেই ‘ছেলেখেলা’ শুরু হইয়াছিল, তাহাতে ব্যাংকটির এহেন পরিণতি অনিবার্যই ছিল। ব্যাংকটিতে প্রকট পারিবারিক আধিপত্য উপলব্ধি করা যায় ছয়জন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মেয়াদপূর্তির পূর্বেই পদত্যাগের মধ্য দিয়া। অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালককেই যখন নিজগৃহে ডাকিয়া লইয়া হেনস্তা করা হয়, তখন প্রতিবাদ করিবার জন্য কাহার স্কন্ধে দুইটি মস্তক থাকিতে পারে? চলতি বৎসরের জানুয়ারিতে ঐ ন্যক্কারজনক ঘটনায় পদত্যাগের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় তিনি স্বপদে ফিরিয়াছেন বটে, স্পষ্টতই নিয়ম-শৃঙ্খলা ফিরাইতে পারেন নাই। সুদ আয় অপেক্ষা সুদ পরিশোধ বাড়িয়া যাওয়ায় পরিস্থিতি যে এখন পাটিগণিতের ছিদ্র চৌবাচ্চার ন্যায়, উহা বুঝিতে বিশেষজ্ঞ হইবার প্রয়োজন নাই। 

ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের দুর্দশা ব্যাংক খাতের সামগ্রিক বিশৃঙ্খলা হইতে বিচ্ছিন্ন নহে। দুর্বল ও রুগ্‌ণ সরকারি ব্যাংকগুলিতে যদ্রূপ সুশাসনের অভাব বিদ্যমান, বেসরকারি ব্যাংকগুলিতে রহিয়াছে স্বজনপ্রীতির বাহুল্য। এই সকল ব্যাংকের মালিকানার সহিত জড়িত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বৃহৎ গ্রাহকগণের অধিকাংশই রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রভাবশালী। তাহাদের অনেকে সরকার কিংবা ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ হইবার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করিতেছেন না।

 

ফলে পর্যবেক্ষক কিংবা সমন্বয়ক বসাইয়াও আমানতকারীর স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যকর ভূমিকা রাখিতে পারিতেছে না। সমাজ ও সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা সত্ত্বেও খেলাপি ঋণ ও ঋণে অনিয়ম বাড়িয়াই চলিতেছে। এই ক্ষেত্রে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। ব্যাংকের মালিকানা কিংবা বৃহৎ গ্রাহকের রাজনৈতিক রং বিবেচনা করা যাইবে না। জরুরি সেই কর্মটি এনবিএল হইতেই সূচিত হউক।

source: samakal.com
 
 
national bank limited durabostha durabastha nbl

You may also like