জাল দলিলের মাধ্যমে সম্পদের মূল্য বেশি দেখিয়ে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের সব আয়োজন সম্পন্ন করেছিল ওষুধ খাতের কোম্পানি এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তদন্তে কোম্পানিটির ভয়াবহ এ জালিয়াতির তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
ভুয়া দলিল করে সম্পদমূল্য বাড়িয়ে দেখানোর অপরাধে কোম্পানিটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) পাঁচ পরিচালককে ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর বাইরে জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার দায়ে কোম্পানিটির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) ও কোম্পানি সচিবকে জরিমানা করা হয়েছে। আর এ জালিয়াতি আড়াল করে কোম্পানিটিকে শেয়ারবাজারে আনার উদ্যোগ নেওয়ায় এর ইস্যু ম্যানেজার শাহজালাল ইকুইটি ম্যানেজমেন্টকেও জরিমানা করা হয়।
এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য বিএসইসির অনুমোদন পায় গত বছরের ৩১ আগস্ট। কোম্পানিটি বাজার থেকে ৯৫ কোটি টাকা সংগ্রহের কথা ছিল। চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি থেকে আইপিওর অর্থ সংগ্রহের কাজ শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু কোম্পানিটির বিরুদ্ধে জাল–জালিয়াতির অভিযোগ ওঠায় শেষ মুহূর্তে আইপিও স্থগিত করা হয়। অভিযোগ তদন্তে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিএসইসি এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ ও ইস্যু ম্যানেজার শাহজালাল ইকুইটি ম্যানেজমেন্টের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শুনানি গ্রহণ করে। কিন্তু শুনানিতে কোম্পানি ও ইস্যু ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান গ্রহণযোগ্য তথ্য–প্রমাণ ও ব্যাখ্যা হাজির করতে পারেনি।
এ কারণে কমিশন কোম্পানির পাঁচ পরিচালক, দুই কর্মকর্তা ও ইস্যু ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানকে মোট পৌনে ৪ কোটি টাকা জরিমানা করেছে। গত মাসে এ জরিমানা করা হয়। তবে বিএসইসির পক্ষ থেকে জরিমানার এ আদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে গতকাল বুধবার। বিএসইসির ওয়েবসাইটে এ আদেশ প্রকাশ করা হয়।
বিএসইসির আদেশে দেখা যায়, সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনির আহমেদকে। এ ছাড়া কোম্পানির চেয়ারম্যান তাহমিনা বেগম এবং পরিচালক সেলিনা আহমেদ, সাদিয়া আহমেদ ও মাকসুদ আহমেদের প্রত্যেককে ৫০ লাখ করে ২ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। কোম্পানির এমডি মনির আহমেদ ও চেয়ারম্যান তাহমিনা বেগম সম্পর্কে স্বামী–স্ত্রী। অপর তিন পরিচালক তাঁদের সন্তান।
এর বাইরে কোম্পানির সিএফও জয়ন্ত কুমার বিশ্বাস ও কোম্পানি সচিব ইশতিয়াক আহমেদকে জরিমানা করা হয়েছে ২৫ লাখ করে ৫০ লাখ টাকা। আর কোম্পানিটির আইপিও ইস্যু ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান শাহজালাল ইকুইটি ম্যানেজমেন্টকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে সাত ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে পৌনে ৪ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের কোম্পানি সচিব ইশতিয়াক আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিএসইসির জরিমানা–সংক্রান্ত আদেশ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে তিনি আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
বিএসইসির তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ তাদের আইপিও প্রসপেক্টাস বা বিবরণীতে রাজধানীর তেজগাঁও, টঙ্গীর মাছিমপুর ও গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ৬৬৮ শতাংশ সম্পত্তি দেখিয়েছে। আইপিও প্রসপেক্টাসে এসব সম্পত্তির দাম দেখানো হয়েছে প্রায় ৮৬ কোটি টাকা।
আর এসব জমির উন্নয়নে খরচ করা হয় আরও প্রায় ৩৭ কোটি টাকা। কিন্তু বিএসইসির তদন্তে বেরিয়ে আসে, জাল দলিল তৈরি করে এসব জমির বেশির ভাগেরই দাম বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। তাই কোম্পানিটির এ সম্পদমূল্যকে ভুয়া বা অসত্য বলে তদন্ত প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, কোম্পানিটির আইপিও কার্যক্রম বর্তমানে স্থগিত রয়েছে। যে অভিযোগের ভিত্তিতে আইপিও স্থগিত করা হয়েছিল, সেটি প্রমাণিত হওয়ায় জরিমানা করা হয়েছে। এখন কমিশন আইপিওর বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।