Home Banking ‘২১ ব্যাংকে কোনো ডলার নেই’

‘২১ ব্যাংকে কোনো ডলার নেই’

by fstcap

দেশে বেশ কিছু ব্যাংকে তীব্র ডলার সংকট চলছে। এর মধ্যে ২১টি ব্যাংকের কাছে কোনো ডলারই নেই। তারা গ্রাহকের চাহিদা অনুসারে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র (Letter of Credit-LC) খুলতে পারছে না। অন্যান্য ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার সংগ্রহ কোনোমতে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ কারণে কখনো কখনো অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে ডলারের বাজারে।

বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। তবে কোন কোন ব্যাংকে এই সংকট রয়েছে, তার নাম প্রকাশ করেননি তিনি।

মেজবাউল হক দাবি করেছেন, সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে ডলারের সংকট নেই। পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। এ দাবি স্বপক্ষে তিনি কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তার দেওয়া তথ্য অনুসারে, গত বছর ২০ নভেম্বর সম্মিলিতভাবে নেট ওপেন পজিশন ছিল ঋণাত্মক। ব্যাংকগুলোতে ৪২৫ মিলিয়ন ডলারের ঘাটতি ছিল। কিন্তু চলতি বছরের একই দিনে নেট ওপেন পজিশন ছিল ধনাত্মক। এ সময়ে সম্মিলিতভাবে ব্যাংকগুলোতে ১৯২ মিলিয়ন উদ্বৃত্ত ছিল।

 

আলাদাভাবে হিসাব করলে, গত বছর ২০ নভেম্বর ৩১ ব্যাংকে ডলার উদ্বৃত্ত ছিল। অর্থাৎ ওই সময়ে তারা যত ডলার বিক্রি করেছে, কিনেছে তারচেয়ে বেশি। এ বছরের ২০ নভেম্বর ডলার উদ্বৃত্ত ছিল ৩৯ ব্যাংকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল ভবনের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে তিনি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, বিদেশি ঋণ ও দায় এবং ডলার সংকট নিরসনে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের তথ্য তুলে ধরেন।

মুখপাত্র জানান, বাফেদা রপ্তানি-রেমিট্যান্স ও আমদানি সব ক্ষেত্রেই ডলারের দাম ৫০ পয়সা কমিয়েছে। এতে করে ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশের টাকার মান বাড়বে। যেটা এতদিন ছিল উল্টোমুখী। আমদানি কমে যাওয়ার কারণে ডলার চাহিদা কমে এসেছে এবং আগামী বছরের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে বিল পরিশোধের চাপ অতি নগণ্যতে নেমে আসবে।

টাকার বিপরীতে ডলারের দাম কমানো হলেও তাতে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের প্রবাহে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক। তিনি বলেন, বাজারে চাহিদা-সরবরাহ পরিস্থিতির আলোকে দাম নির্ধারিত হয়েছে।

রেমিট্যান্স প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, যখন ডলারের দাম ছিল ৮৭/৮৮ টাকা, তখনো দেশে পর্যাপ্ত রেমিট্যান্স এসেছে। তাই ডলারের দাম ৫০ পয়সা কমানোয় রেমিট্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে এমন আশংকা নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ডলার পরিস্থিতির অভাবনীয় উন্নতির দাবি করলেও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ঋণপত্র খোলায় তাদের দুর্ভোগ কমেনি। ডলারের অভাবে বেশিরভাগ ব্যাংক এলসি খুলতে রাজি হচ্ছে না। রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানার কাঁচামাল আমদানিতে তেমন সমস্যা না হলেও দেশী বাজারের জন্য যেসব ইন্ডাস্ট্রি পণ্য উৎপাদন করে তাদেরকে তীব্র সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। কাঁচামালের অভাবে তাদের উৎপাদনক্ষমতার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অব্যবহৃত রাখতে হচ্ছে। তাতে তাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে অনেক কারখানায় শ্রমিক-কর্মচারি ছাঁটাই হচ্ছে।

কাঁচামালের মতো তৈরি পণ্য আমদানিতেও (Finished Goods) একইরকম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এমনকি ওষুধ, মেডিক্যাল ডিভাইস, শিশু খাদ্য ইত্যাদি আমদানির জন্যেও সহজে ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএমএ ভবনের মেডিক্যাল পণ্য বিপপনকারী একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী অর্থসূচককে বলেছেন,  কিছু মেডিকেল পণ্য আমদানির জন্য তিনি তিনটি ব্যাংকে ঘুরেও এলসি খুলতে পারেননি। ব্যাংকগুলো থেকে তাকে বলা হয়েছে, ডলার যোগার করে নিয়ে আসেন, এলসি খুলে দেব।

এদিকে খোলা বাজারেও কমেনি ডলারের সংকট। ভ্রমণ, চিকিৎসা বা উচ্চ শিক্ষার জন্য বাইরে যাওয়ার ডলার সংগ্রহে সাধারণ মানুষকে হিমসিম খেতে হচ্ছে। চাহিদা মাফিক ডলার পাওয়া যাচ্ছে না।

অন্যদিকে ডলার সংকটের কারণে কয়েকটি ব্যাংক তাদের ডুয়েল কারেন্সি ডেবিট কার্ডে ডিসেম্বরের পর থেকে এনডোর্স করবে বলে গ্রাহকদের জানিয়ে দিয়েছে। যারা এরই মধ্যে ডলার এনডোর্স করেছেন, তাদের কার্ডেও ডিসেম্বরের পর থেকে ডলার ব্যবহার করা যাবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

 

Source: arthosuchak

Dollar Crisis in Bank Bangladesh

You may also like