শেয়ারবাজারে ব্যাংকের নিজস্ব বিনিয়োগের জন্য গঠিত ৬ হাজার ৯৬ কোটি টাকার বিশেষ তহবিলের আকার ও সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বর-২০২৬ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তহবিলের ৫০ শতাংশের কাছাকাছি এখনো বিনিয়োগ না হওয়ায় এই নিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যভুক্ত ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের কাছে আকার ও সময়সীমা বৃদ্ধির দাবি জানানো হয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক তহবিলের মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক认为, বিশেষ তহবিলের পরিমাণ বৃদ্ধি করা বর্তমানে যৌক্তিক নয়। তবে, এই তহবিলের মেয়াদপূর্তিতে যদি বিনিয়োগকারী ব্যাংকগুলো বৃহৎ পরিমাণে বিনিয়োগ উত্তোলন করে, তাহলে শেয়ারবাজারে বিক্রয় চাপ সৃষ্টি হবে, যা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
অতিরিক্ত বিনিয়োগকৃত বেশিরভাগ সিকিউরিটিজের বাজার মূল্য ক্রয়মূল্যের চেয়ে কম হওয়ায়, ব্যাংকগুলো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এরফলে অবিক্রিত সিকিউরিটিজের বিপরীতে অতিরিক্ত প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। এই কারণে আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে গভর্নরের অনুমোদনে বিশেষ তহবিলের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, শেয়ারবাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়াতে ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের জন্য ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এই তহবিলকে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা বা এক্সপোজার লিমিটের বাইরে রাখা হয়।
ব্যাংকগুলো নিজস্ব বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই সুবিধা পেয়ে আসছে। কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানোর পর বিশেষ এই তহবিলের সময়সীমা শেষ হয় ৯ ফেব্রুয়ারি। এমন অবস্থায় বিশেষ এই তহবিলের মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি তহবিলের আকার বাড়ানোর দাবি জানায় ডিবিএ।
গভর্নরকে দেওয়া চিঠিতে ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম বিশেষ এই তহবিল সুবিধার মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত ও তহবিলের আকার ২০০ কোটি থেকে ৩০০ কোটি টাকায় উন্নীত করার দাবি জানান।
চিঠিতে ডিবিএর সভাপতি বলেন, বর্তমানে দেশের শেয়ারবাজার একটি চ্যালেঞ্জিং সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালের শেষভাগ থেকে বাজারে দীর্ঘ মন্দা বিরাজ করছে। যার ফলে বাজার মূলধন হারিয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। দীর্ঘ এই মন্দায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে বাজার মধ্যস্থতাকারী, স্টক-ব্রোকার, সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ ২০ লাখের বেশি বিনিয়োগকারীকে প্রভাবিত করেছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিও ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এই অবস্থায়, যদি বিশেষ তহবিলটি বন্ধ হয়ে যেত, তবে প্রাতিষ্ঠানিক অনেক পোর্টফোলিও বিনিয়োগে বড় ধরনের ক্ষতি হত, যার নেতিবাচক প্রভাব শেয়ারবাজারে পড়ত। তাই বাজারের অবস্থা বিবেচনায়, তহবিলের মেয়াদ এবং আকার বৃদ্ধির অনুরোধ জানানো হয়েছিল, যা এখন কার্যকর করা হয়েছে।