পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ারের দাম গত কয়েক মাস ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। ছয় মাসে শেয়ারটির দাম প্রায় ৫০০ শতাংশ বৃদ্ধির পর লোকসানের তথ্য জানিয়েছে বিবিধ খাতের কোম্পানিটি। একই সঙ্গে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) খান ব্রাদার্সের সমাপ্ত হিসাব বছরের (৩০ জুন, ২০২৩) নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ। পর্যালোচনা শেষে তা প্রকাশ করে কোম্পানিটি।
সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালেও লোকসান দিয়েছে খান ব্রাদার্স। এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ০৬ পয়সা। এ হিসেবে কোম্পানিটির মোট লোকসান হয়েছে ৫৮ লাখ ৮৪ হাজার ৭৯২ টাকা। ফলে ২০২৩ সালে শেয়ারহোল্ডারদের কোন লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ।
জানা গেছে, গত চার বছর ধরে টানা লোকসান দিয়ে যাচ্ছে পুঁজিবাজারের বিবিধ খাতে তালিকাভুক্ত খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ। ২০১৯ সালের পর কোম্পানিটি এখন পর্যন্ত আয়ে ফিরতে পারেনি। লোকসানে থেকে গত তিন বছর বিনিয়োগকারীদের নামমাত্র লভ্যাংশ দিলেও এবার তা থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। অথচ গত কয়েক মাস ধরেই শেয়ারটির দাম ছিল লাগামহীন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য বলছে, গত ৩০ এপ্রিল খান ব্রাদার্সের প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা ৪০ পয়সা দরে লেনদেন হয়েছিল। এরপর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে লোকসানি কোম্পানিটির শেয়ারদর। গত রোববার (১২ নভেম্বর) খান ব্রাদার্সের শেয়ার লেনদেন হয় ৬২ টাকায়। অর্থাৎ মাত্র সাড়ে ছয় মাসের ব্যবধানেই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৫১ টাকা ৬০ পয়সা বৃদ্ধি পেয়েছে। শতাংশ হিসেবে সাড়ে ছয় মাসে দর বৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৯৬ দশমিক ১৫ শতাংশে।
ডিএসইর তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত কয়েক মাসে মূলত খান ব্রাদার্সের বিপুল পরিমাণ শেয়ার কয়েকগুণ বেশি দামে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। গত ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানিটির ৩৮ দশমিক ০২ শতাংশ শেয়ার ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। একই সময়ে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের কাছে ছিল খান ব্রাদার্সের ৩১ দশমিক ৮৫ শতাংশ শেয়ার। অপরদিকে জুলাইয়ের ৩১ তারিখে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ছিল প্রতিষ্ঠানটির ১৮ দশমিক ৯২ শতাংশ শেয়ার। এ সময়ে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের কাছে ছিল ৫০ দশমিক ৯৫ শতাংশ শেয়ার। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার ধারণের পরিমাণ ১৯ দশমিক ১০ শতাংশ পরিবর্তন হয়েছে৷ বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই এক মাসে কোনো চক্র বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনে তা পরবর্তীতে উচ্চ মূল্যে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ধরিয়ে দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে দেশের শেয়ারবাজারের বিবিধ খাতে তালিকাভুক্ত হয় খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। তালিকাভুক্তির পর ২০১৭ সাল পর্যন্ত চার বছর শেয়ারহোল্ডারদের বোনাস লভ্যাংশ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৮, ২০২০, ২০২১ এবং ২০২২ সালে নামমাত্র ২ শতাংশ বা ২ পয়সা করে নগদ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি। ২০১৯ সালে শেয়ার প্রতি ২৫ পয়সা করে আয় করলেও বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়নি খান ব্রাদার্স। আর এবার ২০২৩ সালেও লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
source: barta24.com