পরপর তিন মাস রেমিট্যান্সের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। অক্টোবর, নভেম্বরের পর বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরেও রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের ঊর্ধ্বমুখী ধারা দেখা যাচ্ছে। অক্টোবরের পর নভেম্বর মাসেও প্রায় ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। অক্টোবরে পাঠিয়েছিলেন ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ (১.৯৮ বিলিয়ন) ডলার; নভেম্বরে পাঠিয়েছেন ১৯৩ কোটি (১.৯৩ বিলিয়ন) ডলার। নভেম্বরের এই রেমিট্যান্স ছিল গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালের নভেম্বরে ১৫৯ কোটি ৫২ লাখ (১.৫৯ বিলিয়ন) প্রবাসী আয় দেশে এসেছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি রেমিট্যান্স প্রবাহের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, গত ২০২৩ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরের প্রথম আট দিনে (১ থেকে ৮ ডিসেম্বর) ৫৩ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। প্রতি দিনের গড় হিসাবে এসেছে ৬ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। মাসের বাকি ২৩ দিনে (৯ থেকে ৩১ ডিসেম্বর) এই হারে রেমিট্যান্স আসলে মাস শেষে রেমিট্যান্সের অঙ্ক ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ২ দশমিক শূন্য ছয় বিলিয়ন (২০৬ কোটি ৪২ লাখ) ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে।
গত বছরের ডিসেম্বরে ১৬৯ কোটি ৯৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৫ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। অক্টোবরে প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৬ কোটি ৩৫ লাখ ডলার; নভেম্বরে এসেছিল ৬ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।
ব্যাংকগুলোর আড়াই শতাংশ বাড়তি প্রণোদনায় প্রবাসী আয় বাড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। এছাড়া অনেক ব্যাংক বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে বেশি দামে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করায় প্রবাসী আয় বাড়ছে বলে জানিয়েছেন তারা।
গত সেপ্টেম্বরে ১৩৩ দশমিক ৪৪ কোটি (১.৩৩ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। একক মাসের হিসাবে যা ছিল সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। ২০২২ সালের অক্টোবরে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ (১.৫২ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। নভেম্বরে পাঠিয়েছিলন ১৫৯ কোটি ৫২ লাখ ডলার।
২০২০ সালের প্রথম দিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। দেশে দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় লকডাউন; সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়। কমতে শুরু করে রেমিটেন্স। সেই ধাক্কায় ২০২০ সালের মার্চে রেমিট্যান্স ১২৭ কোটি ৬২ লাখ ডলারে নেমে আসে। এপ্রিলে তা আরও কমে ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ডলারে নেমে আসে। এর পর থেকে অবশ্য রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ডিসেম্বরের আট দিনে বেসরকারি ৪৩ ব্যাংকের মাধ্যমে ৪৬ কোটি ১৯ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। রাষ্ট্রমালিকানাধীন ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৫ কোটি ৬২ লাখ ১০ হাজার ডলার। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ৩২ লাখ৭০ হাজার ডলার। এর বাইরে ৯ বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার।
গত ২২ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে আমদানি, রপ্তানি ও রেমিটেন্স সব পর্যায়ে ডলারের দর ৫০ পয়সা করে কমানোর ঘোষণা দেয় বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি)। ২৩ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়।
সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম ১১০ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমে ১১০ টাকায় নেমে আসে। নভেম্বর ২৯ আরও ২৫ পয়সা কমিয়ে ১০৯ টাকা ৭৫ পয়সা করা হয় যা গত রোববার থেকে কার্যকর হয়েছে। কিন্তু কোনো ব্যাংকই এই দরে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে না; কোনো কোনো ব্যাংক ১০-১১ টাকা বেশি দামে রেমিটেন্স দেশে আনছে।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে সরকারের বিদ্যমান প্রণোদনার বাইরে গত ২২ অক্টোবর থেকে আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। সরকার রেমিট্যান্সে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে ২ টাকা ৫০ পয়সা বা আড়াই টাকা যোগ করে তার পরিবার-পরিজনকে (যার নামে প্রবাসী টাকা পাঠান) ১০২ টাকা ৫০ পয়সা দেয়া হয়। ২২ অক্টোবর থেকে ১০২ টাকা ৫০ পয়সার সঙ্গে আরও আড়াই টাকা অর্থাৎ মোট ১০৫ টাকা পাচ্ছেন।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি (১.৯৭ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। দ্বিতীয় মাস আগস্টে ১৬০ কোটি (১.৬ বিলিয়ন) ডলার এসেছিল। তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহে ধস নামে; আসে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।
source: sangbad.net.bd
remittance BD bangladesh