CSE DSE Stockmarket Sharebazar Pujibazar taka stockholder investor
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে স্টক ব্রোকার ও ডিলারদের জন্য প্রবিধান তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত খসড়া তৈরি করেছে কমিশন। এখন স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেওয়া হচ্ছে।
তবে নতুন প্রবিধানের অনেক ধারার বিষয়ে স্টক ব্রোকার ও ডিলারদের আপত্তি রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আরও পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করে মতামত দেবে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের ফোরাম সিইও ফোরাম। এরই মধ্যে সংগঠন দুটি আলাদা করে মতামত দেওয়ার বিষয়ে সময় বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছে। ডিবিএ মতামত দেওয়ার জন্য তিন মাস এবং সিইও ফোরাম এক মাস সময় চেয়ে আবেদন করেছে।
জানা গেছে, ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক ডিলার, স্টক ব্রোকার এবং অনুমোদিত প্রতিনিধি) রেগুলেশনস, ২০২৩’ শিরোনামের খসড়া প্রবিধানটি বিএসইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এই প্রবিধানে বিএসইসি ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধনের প্রয়োজনীয়তা, বিনিয়োগ, ক্লায়েন্ট অ্যাকাউন্ট পরিচালনা এবং স্টক ব্রোকার ও ডিলারদের জন্য কর্মকর্তা এবং অনুমোদিত প্রতিনিধিদের নিয়োগ ও সমাপ্তি সম্পর্কিত নির্দেশিকা তৈরি করেছে।
খসড়া বিধিমালা অনুযায়ী, স্টক ব্রোকার লাইসেন্স পেতে আবেদনকারীদের পরিশোধিত মূলধন হিসেবে কমপক্ষে ৫ কোটি টাকা, বিদেশি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কমপক্ষে ৮ কোটি টাকা এবং সম্পূর্ণ বিদেশি মালিকানা হলে ১০ কোটি টাকা রাখতে হবে। স্টক ডিলার লাইসেন্সের ক্ষেত্রে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের পরিশোধিত মূলধন কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা। একটি স্টক ব্রোকার এবং স্টক ডিলার লাইসেন্স পেতে, ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন প্রয়োজন ১৫ কোটি টাকা এবং যৌথ উদ্যোগ বা সম্পূর্ণ বিদেশি মালিকানার জন্য এটি হতে হবে ২০ কোটি টাকা। যারা মার্জিন ঋণ অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে চান, তাদের ঝুঁকিভিত্তিক মূলধন পর্যাপ্ততা নিয়ম মেনে ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন বজায় রাখতে হবে। প্রতিটি স্টক ডিলার বা ব্রোকারকে পরিশোধিত মূলধনের নেট মূল্য হিসেবে কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ বজায় রাখতে
হবে। স্টক ডিলারদের উচিত তার পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ সরকারি সিকিউরিটিজসহ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা। খসড়া প্রবিধান গেজেট আকারে প্রকাশিত হওয়ার পরে বিদ্যমান ডিলার এবং মধ্যস্থতাকারীদের পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে প্রয়োজনীয় নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে।
এদিকে একটি ব্রোকারেজ হাউস ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন মেনে সর্বোচ্চ ১৫টি শাখা খুলতে পারে। তবে তারা আরও শাখা খুলতে চাইলে তাদের প্রত্যেকের অতিরিক্ত পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে ২ কোটি টাকা। শাখা বা বুথের এক্সটেনশন অফিস খোলা যাবে না। এ ছাড়া স্টক ব্রোকাররা কোনো সাবসিডিয়ারি বা অ্যাসোসিয়েট কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে পারে না। প্রতিটি ব্রোকারেজ হাউসকে ক্লায়েন্টদের মধ্য থেকে একজন প্রতিনিধিকে হাউসটির বোর্ডে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ করতে হবে। এ ছাড়া প্রবিধান অনুযায়ী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ বা অবসান করতে ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে অবশ্যই বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদন নিতে হবে।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং ডিএসইর সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ রশিদ লালী আমাদের সময়কে বলেন, বাজারের নেতিবাচক অবস্থার মধ্যে এই প্রবিধান করা অন্যায়। বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে, এ ধরনের প্রবিধান পুঁজিবাজারকে সম্প্রসারণ নয়, সংকুচিত করবে। এখানে অনেক কিছুই সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। পেইডআপ ক্যাপিটালের ৭৫ শতাংশ বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বিএসইসি ঠিক করে দেবে তা ঠিক হবে না। পরিচালনা পর্ষদে ক্লায়েন্টের মধ্য থেকে নিয়োগ দিতে হবে, এটি না করে স্বতন্ত্র পরিচালক দেওয়া যেতে পারে।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সাজেদুর রহমান বলেন, বিএসইসির খসড়া আইন ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ব্যবসা পরিচালনার জন্য সহায়ক নয়। প্রবিধানের বিষয়ে আমরা এখনো পর্যবেক্ষণ করছি। এ বিষয়ে মতামত দিতে সময় প্রয়োজন। এরই মধ্যে মতামত দেওয়ার জন্য কমিশনে আবেদন করেছি।
ইবিএল সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরাও পর্যবেক্ষণ করছি। মতামত দেওয়ার জন্য সিইও ফোরাম থেকে এক মাস সময় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। বিষয়টি পর্যালোচনার পরই মতামত দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম আমাদের সময়কে বলেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় কমিশন সবসময় কাজ করছে। আর বিনিয়োগকারীদের সবচেয়ে বেশি ডিল করে স্টক ব্রোকার। তাদের কাছেই বিনিয়োগকারীদের টাকা এবং সিকিউরিটিজ জমা থাকে। তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে নতুন প্রবিধান করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেওয়ার পর তা পর্যালোচনা করে কমিশন সভায় পাঠানো হবে। এরপর কমিশন মিটিংয়ে চূড়ান্ত করার পর গেজেট প্রকাশ করা হবে।