Home Finance পায়রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় তিন বছরে বেড়ে তিনগুণ!

পায়রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় তিন বছরে বেড়ে তিনগুণ!

by fstcap

পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটটি উৎপাদন শুরু করে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। ২০২১ সালে মে মাসে দ্বিতীয় ইউনিট চালুর পর পুরোদমে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় কেন্দ্রটিতে। ওই অর্থবছর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় পড়ে গড়ে চার টাকা ৫৬ পয়সা। মুনাফাসহ এর বিক্রয়মূল্য দাঁড়ায় ছয় টাকা ২৫ পয়সা। তবে পরবর্তী তিন বছরে এ ব্যয় প্রায় তিনগুণ হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) গত চার অর্থবছরের হিসাব বিশ্লেষণ করে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যয়ের এ হিসাব পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, গত অর্থবছর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে গড়ে ১৩ টাকা ৬৭ পয়সা। মুনাফাসহ এর বিক্রয়মূল্য দাঁড়ায় ১৮ টাকা ৩৭ পয়সা। অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় প্রায় তিনগুণ হয়েছে। আর বিক্রয়মূল্য থেকে প্রাপ্ত আয় হয়েছে প্রায় দুই দশমিক ৯৪ গুণ। যদিও কয়লার দাম তিন বছরে তিন দশমিক ২০ গুণ হয়েছে।

বিসিপিসিএলের তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন হয় ৮৭ কোটি ৫২ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ। এতে ব্যয় হয় (কস্ট অব সেল) ৩৯৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় ছিল চার টাকা ৫৬ পয়সা। এর মধ্যে শুধু কয়লার দাম তথা জ্বালানি ব্যয় ছিল তিন টাকা ৫৮ পয়সা। আর ৮৭ কোটি ৫২ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে বিসিপিসিএলের আয় হয় প্রায় ৫৪৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অর্থাৎ বিদ্যুতের গড় বিক্রয়মূল্য পড়ে ছয় টাকা ২৫ পয়সা।

পুরোদমে চালুর ফলে ২০২০-২১ অর্থবছর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বেড়ে হয় ৩৮২ কোটি ২৯ লাখ ইউনিট। এতে ব্যয় হয় দুই হাজার ২৮৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় ছিল পাঁচ টাকা ৯৮ পয়সা। এর মধ্যে শুধু কয়লা বাবদ ব্যয় ছিল তিন টাকা ৪৯ পয়সা। ৩৮২ কোটি ২৯ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে বিসিপিসিএলের আয় হয় প্রায় তিন হাজার ৭০১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এতে বিদ্যুতের গড় বিক্রয়মূল্য পড়ে ৯ টাকা ৬৮ পয়সা। অর্থাৎ জ্বালানি ব্যয় কমলেও ওই অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় বাড়ে ৩১ দশমিক ১৪ শতাংশ ও গড় বিক্রয়মূল্য বাড়ে ৫৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

২০২১-২২ অর্থবছর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯৯ কোটি ৮৩ লাখ ইউনিট। অর্থাৎ উৎপাদন বাড়ে সাড়ে চার শতাংশের মতো। ওই অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিসিপিসিএলের ব্যয় হয় চার হাজার ৪৬০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের গড় ব্যয় ছিল ১১ টাকা ১৬ পয়সা। এর মধ্যে শুধু কয়লা বাবদ ব্যয় ছিল সাত টাকা ৯৯ পয়সা। আর ৩৮২ কোটি ২৯ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে আয় হয় প্রায় পাঁচ হাজার ৯৬৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এতে বিদ্যুতের গড় বিক্রয়মূল্য পড়ে ১৪ টাকা ৯৩ পয়সা।

এ হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় বাড়ে ৮৬ দশমিক ৬২ শতাংশ। তবে কয়লা বাবদ গড় ব্যয় প্রায় ১২৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। যদিও কেন্দ্রটির বিদ্যুতের গড় বিক্রয়মূল্য বাড়ে ৫৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। এতে কোম্পানিটির মুনাফা মার্জিন হ্রাস পায়।

এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদনে রেকর্ড হয়। গত অর্থবছর কেন্দ্রটির উৎপাদন দাঁড়ায় ৬৫৫ কোটি ১৩ লাখ ইউনিট। অর্থাৎ উৎপাদন প্রায় ৬৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত অর্থবছর কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হয় আট হাজার ৯৫২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় পড়ে ১৩ টাকা ৬৭ পয়সা। এর মধ্যে শুধু কয়লা বাবদ ব্যয় ছিল ১১ টাকা ৪৪ পয়সা। অর্থাৎ গড় উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ২২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আর কয়লা বাবদ গড় জ্বালানি ব্যয় বেড়েছে ৪৩ দশমিক ১৮ শতাংশ।

৬৫৫ কোটি ১৩ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে ২০২২-২৩ অর্থবছর বিসিপিসিএলের আয় হয় প্রায় ১২ হাজার ৩৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ বিদ্যুতের গড় বিক্রয়মূল্য পড়ে ১৮ টাকা ৩৭ পয়সা। এতে কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ বিক্রির গড় বিক্রয়মূল্য বেড়েছে ২৩ শতাংশ।

জানতে চাইলে বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, গত অর্থবছর কয়লার দাম তিনগুণ হয়ে যায়। এজন্য জ্বালানি ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ে। তবে চলতি অর্থবছর কয়লার দাম কমছে। এতে ২০২৩-২৪ অর্থবছর উৎপাদন ব্যয় কমে আসবে। এছাড়া ডলারের বিনিময় হার অনেক বেড়ে গেছে। এ কারণেও বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়নি।

তিনি আরও বলেন, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ, কয়লার দাম পাস থ্রু পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) তথা সরকার পরিশোধ করে দেয়। বাকিটা বিসিপিসিএল নিজস্ব দক্ষতা দিয়ে কাভার করার চেষ্টা করছে। আগামীতে কেন্দ্রটির উৎপাদন ব্যয় কমে আসবে।

প্রসঙ্গত, গত অর্থবছর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহƒত কয়লা বাবদ গড় ব্যয় ছিল ৯ টাকা ২০ পয়সা। আর রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা বাবদ গড় ব্যয় ছিল ১০ টাকা ৯৪ পয়সা। অর্থাৎ আদানির চেয়ে পায়রায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার দাম ২৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি পড়ে। রামপালের চেয়ে এ ব্যয় বেশি ছিল প্রায় সাড়ে চার শতাংশ।

source: sharebiz.net

 

Payra electricity production costs increased three times in three years! power house

You may also like