সংকটে থাকা বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকে পরিচালকদের দ্বন্দ্বের কারণে আবারও অস্থিরতা শুরু হয়েছে। একজন পরিচালকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকটির ৪০তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজনের ওপর আগামী ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থিতাবস্থা জারি করেছেন চেম্বার আদালত। ওই দিন এ বিষয়ে আপিল বিভাগে শুনানি হবে। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম গতকাল মঙ্গলবার আদেশটি দেন। এই আদেশের ফলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ব্যাংকটির এজিএম হবে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আদালতে ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তানজীবুল আলম ও আহসানুল করিম। ব্যাংকের পরিচালক পারভীন হক সিকদারের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
এর আগে গত সোমবার পরিচালক পারভীন হক সিকদারের রিটের শুনানি নিয়ে ২১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে ব্যাংকটির এজিএম স্থগিত করেন হাইকোর্ট। ব্যাংকটির গত ৩ অক্টোবরের স্থগিত হওয়া ৪০তম এজিএম ২১ ডিসেম্বর আয়োজনের কথা ছিল।
বাদ পড়ার আশঙ্কায় পারভীন হক
ন্যাশনাল ব্যাংকের অন্যতম পরিচালক পারভীন হক সিকদার ‘প্রহসনমূলক ভোটে’ পরিচালক পদ থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কা করছেন। এ জন্য তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) চিঠি দিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অধীনে এজিএম অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছেন।
পারভীন হক সিকদারের চিঠিতে বলেন, ‘ব্যাংকের কোম্পানি সচিবের চিঠির মাধ্যমে জানতে পেরেছি, ২১ ডিসেম্বর ব্যাংকের ৪০তম এজিএম ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যদিও সেদিন এজিএমের অ্যাজেন্ডা পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদন হয়নি। কোম্পানির আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশনের ১০৩ ও ১০৪ ধারা অনুযায়ী অবসর গ্রহণকারী পরিচালকবৃন্দ পুনর্নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।
কিন্তু ব্যাংকের ৩৯তম এজিএমে কোম্পানি আইনের এই বিধান লঙ্ঘন করা হয়। ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে এজিএমের আয়োজন করা হয়। ষড়যন্ত্র করে পরিচালক পুনর্নির্বাচনের অ্যাজেন্ডাকে এড়িয়ে অবসর গ্রহণকারী তিনজন পরিচালকের মধ্যে দুজন উদ্যোক্তা পরিচালককে পাতানো ভোটাভুটির মাধ্যমে পরিচালক পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়।’
পারভীন হক সিকদার লিখেছেন, ‘এর আগে কিছু পরিচালক পরস্পরের যোগসাজশে ও বেআইনিভাবে কোম্পানি আইনের বিধান লঙ্ঘন করে অনলাইনে ভোটের আয়োজন করে। তারা ব্যাংকের বিও হিসাবের তালিকা সংগ্রহ করে নিজেরাই অনলাইনে ভোট দিয়ে উদ্যোক্তা পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন ও মাবরুর হোসেনকে পরিচালক পদ থেকে অসাধু উপায়ে বাদ দেন।
পাতানো ৩৯তম এজিএমের ভেন্ডর ছিল সেটকম আইটি লিমিটেড। তাদের একজন কর্মকর্তা জানান, ন্যাশনাল ব্যাংকের দুজন পরিচালক জোরপূর্বক নিয়মবহির্ভূতভাবে পুনর্নির্বাচনের অ্যাজেন্ডাকে এড়িয়ে ভোটের আয়োজন করতে বাধ্য করায় ও তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ভোটের কাজ শেষ করে। এর পরদিন সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রন হক সিকদারকে পুনর্নির্বাচিত দেখানো হয় এবং অন্য দুজনকে বাদ দেওয়া হয়।’
পারভীন হক সিকদার চিঠিত লেখেন, ‘আমি অবহিত হয়েছি যে এবারেও গতবারের মতো অবসর গ্রহণকারী পরিচালকগণের সংখ্যা অধিক না হলেও এবং কোনো আইনের বিধান না থাকলেও কতিপয় পরিচালক অসাধু উপায়ে অনলাইনে তাঁদের পাতানো ভোটাভুটির মাধ্যমে একাধিক পরিচালককে বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
আমি আশঙ্কা করছি যে আমাকেও প্রহসনমূলক ভোটের মাধ্যমে একই প্রক্রিয়ায় পরিচালক পদ থেকে বাদ দেওয়া হবে।’ পরিচালকদের পুনর্নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় অধিকতর স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের ৪০তম এজিএম সরাসরি বিএসইসির তত্ত্বাবধানে আয়োজনের অনুরোধ জানান তিনি।
পারভীন হক সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এজিএমে অনিয়ম হতে পারে, এই আশঙ্কায় আমি চিঠি লিখেছি। ব্যাংকটি নিয়মের মধ্যে থাকুক, এটাই আমার চাওয়া।’
প্রসঙ্গত, ন্যাশনাল ব্যাংক প্রথম প্রজন্মের ব্যাংক। ব্যাংকটির উদ্যোক্তাদের একজন ছিলেন পারভীন হকের প্রয়াত পিতা জয়নুল হক সিকদার। এখন তাঁর পরিবারের সদস্যরা ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও পরিচালক পদে আছেন। উদ্যোক্তাদের কয়েকজনের ঋণ জালিয়াতির কারণে ব্যাংকটি এখন ধুঁকছে।
source: prothomalo.com
National bank AGM authority conflict porichalok dondo