Commodity Exchange
দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শুরু হতে যাচ্ছে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম শুরু হতে চললেও পরবর্তীতে এটিকে স্বতন্ত্র একটি এক্সচেঞ্জে পরিণত করা হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী বিকিকিনির বহুল প্রত্যাশিত প্ল্যাটফরম কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চট্টগ্রামে না দিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের আওতায় করারও তোড়জোড় চলছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রামেই যাত্রা শুরু করছে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ। গত সোমবার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুর চূড়ান্ত অনুমোদন গেজেটে প্রকাশিত হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, আগামী মাস দুয়েকের মধ্যে চট্টগ্রামে এই মার্কেটের কার্যক্রম শুরু হবে। নতুন এই উদ্যোগের মাধ্যমে চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলার প্রথম ধাপ সম্পন্ন হলো।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনাবেচার আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফরমের নাম কমোডিটি এক্সচেঞ্জ। স্টক এক্সচেঞ্জে যেমন শেয়ার, বন্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ড কেনাবেচা হয়, তেমনি কৃষিপণ্য, গবাদিপশু, মাছ, বনজ সম্পদ, খনিজ ও জ্বালানি, স্বর্ণসহ উৎপাদিত যেকোনো পণ্যের কেনাবেচা চলে। এক্ষেত্রে এসব পণ্য ক্রেতা বা বিক্রেতার সামনে প্রদর্শন করা হয় না। পণ্যগুলো সংরক্ষিত থাকে বিভিন্ন গুদামে।
কমোডিটি এক্সচেঞ্জে কাগজ বা ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে এসব পণ্যের মালিকানা হাতবদল হয়। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশেও কমোডিটি এক্সচেঞ্জ আছে। ইউরোপ আমেরিকার কথা বাদ দিলেও আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারত ছাড়া পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং ভুটানে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ রয়েছে।
বাংলাদেশে ১৮ কোটি মানুষের বিশাল এক বাজার থাকলেও এখানে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ ছিল না। দেশে একটি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ গড়ে তুলতে ২০০৭ সালের ১৬ এপ্রিল সরকারের পক্ষ থেকে ‘কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা যাচাই’ শীর্ষক একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে এই উদ্যোগ চাপা পড়ে যায়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জ কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠে। ওই বছরের আগস্টে চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি দিয়ে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার আগ্রহ জানায়।
অর্থ মন্ত্রণালয় ওই চিঠি দেশের শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিতে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানায়। পরবর্তীতে চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জ কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ভারতের মুম্বাইভিত্তিক মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জের (এমসিএক্স) সাথে চুক্তি করে।
চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জ নিজেদের আওতায় কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার তোড়জোড় করলেও ঢাকা স্টক একচেঞ্জও এক পর্যায়ে আগ্রহী হয়ে উঠে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের আওতায় কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করার চেষ্টা শুরু হয় কিছুদিন ধরে। কিন্তু সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে অবশেষে চট্টগ্রামেই কমোডিটি স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ অনুযায়ী কমোডিটি এক্সচেঞ্জে কেনাবেচা হবে কাগুজে বা ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে। মূল পণ্যটি গুদামে বা মাঠে রেখে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে তা কেনাবেচা সম্পন্ন হবে। একটি নির্দিষ্ট সময় পর এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে এটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি বা হস্তান্তর সম্পন্ন হবে। এটি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্যের বিকিকিনির ক্ষেত্রে দারুণ এক সম্ভাবনা তৈরি করবে মন্তব্য করে চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, একজন বিক্রেতা যেন প্রকৃত মূল্য পান, একটি পণ্য যাতে সঠিকভাবে বাজারে উপস্থাপিত হয়, কোনো সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা যাতে বাজারে না থাকে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে তা শতভাগ নিশ্চিত করা সম্ভব। এখানে গোপন কিছুই থাকবে না। সবাই সবকিছু দেখবেন, বিক্রি করবেন, কিনবেন।
মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, এটি চট্টগ্রামকে বিশ্ব দরবারে নতুনভাবে উপস্থাপিত করবে। চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী করার ক্ষেত্রে এটি প্রথম ধাপ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
কমোডিটি এক্সচেঞ্জে কার্যক্রমের উদাহারণ দিয়ে তিনি বলেন, ধরুন কেউ আলু বা পেঁয়াজ বিক্রি করবেন। এক্ষেত্রে সরাসরি কৃষক কিংবা হিমাগারের মালিক বা যার মালিকানায় পণ্যটি রয়েছে তিনি তা কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারবেন। এখান থেকে যে কেউ ওই আলু বা পেঁয়াজ কিনতে পারবেন।
আইনের মাধ্যমে এই আলু কেনাবেচার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য নির্ধারিত একটি সময় বেঁধে দেয়া হবে। ওই সময় ক্রয়াদেশটি যার হাতে থাকবে, তাকে বিক্রিত ওই আলু বুঝিয়ে দেয়া হবে। এটি অত্যন্ত স্বচ্ছ এবং গ্রহণযোগ্য একটি প্রক্রিয়া উল্লেখ করে মেজর (অব.) এমদাদ বলেন, প্রাথমিকভাবে চিটাগাং স্টক
এক্সচেঞ্জের একটি উইন্ডো হিসেবে এই এক্সচেঞ্জ চালু করা হচ্ছে। তবে এটিকে স্বতন্ত্র একটি এক্সচেঞ্জে পরিণত করা হবে। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের যে বিশাল বাজার তাতে দেশের কমোডিটি এক্সচেঞ্জ অত্যন্ত সমৃদ্ধ হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মেজর (অব.) এমদাদ বলেন, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ আমাদের রপ্তানি বাজারও সমৃদ্ধ এবং সম্প্রসারিত করবে। বর্তমানে আমরা যেসব পণ্য আমদানি বা রপ্তানি করি তার পুরোটাই ক্রেতা ও বিক্রেতা নিজেদের মধ্যে করে থাকেন। কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু হলে বিশ্বের সব ক্রেতা বিক্রেতাকে ভার্চ্যুয়াল
প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে এসব পণ্য কেনাবেচার সুযোগ করে দেবে। এতে বাজার সম্প্রসারণের পাশাপাশি পণ্যমূল্যেও ভারসাম্য নিশ্চিত হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন সিন্ডিকেট যেভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু হলে তা পুরোপুরি ভেঙে যাবে। আগামী মাস দুয়েকের মধ্যে চট্টগ্রামেই দেশের এই বাজার চালু হচ্ছে বলেও মেজর এমদাদ উল্লেখ করেন।
Source: dainik azadi