CSE DSE Stockmarket Sharebazar Pujibazar compalyclosed
নানা ধরনের আর্থিক অনিয়মের জন্য শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত মেঘনা পিইটি ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) পাঁচ পরিচালককে সাড়ে তিন কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ জরিমানা করেছে। কোম্পানিটির কার্যক্রম নিয়ে বিএসইসির গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জরিমানা করা হয়েছে।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটির তদন্ত কমিটি সরেজমিনে কোম্পানিটির কারখানা ও কার্যালয় পরিদর্শনে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা এবং ২০২১ সালের জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে নানা ধরনের অনিয়ম ও অসংগতি খুঁজে পায়। তার ভিত্তিতে কমিশন কোম্পানিটির সব পরিচালককে জরিমানা করেছে।
এর মধ্যে কোম্পানির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাকারিয়া ও এমডি এম এফ কামালকে ১ কোটি টাকা করে ২ কোটি টাকা এবং পরিচালক কবির আহমেদ, আবু তাহের ও ওয়ালিউল্লাহকে ৫০ লাখ করে দেড় কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। আদেশ জারির ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে এ জরিমানা পরিশোধ না করলে প্রতিদিনের বিলম্বের জন্য ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
বিএসইসির আদেশ অনুযায়ী, ২০০৪ সাল থেকে মেঘনা পিইটি ইন্ডাস্ট্রিজের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। দেড় যুগ ধরে কোম্পানিটি বন্ধ থাকলেও আইন অনুযায়ী মূল্য সংবেদশীল এ তথ্য বিনিয়োগকারীদের জানায়নি। এর বাইরে কোম্পানিটিতে প্রায় সাড়ে ২৫ কোটি টাকার আর্থিক অনিয়মও খুঁজে পেয়েছে বিএসইসির তদন্ত কমিটি।
বিএসইসির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোম্পানিটি তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে যন্ত্রপাতি ও জায়গাজমি মিলিয়ে মোট ৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকার সম্পদমূল্য দেখিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানিটি বন্ধ থাকায় এ সম্পদমূল্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ক্ষতিজনিত সম্পদ মূল্যায়নের দরকার ছিল। কিন্তু কোম্পানিটি এ ধরনের কোনো মূল্যায়ন করেনি। ফলে সম্পদমূল্য আদৌ কত, সেই সম্পর্কে সঠিক তথ্য নেই।
আবার কোম্পানিটি আর্থিক প্রতিবেদনে গুদামে সোয়া দুই কোটি টাকার পণ্য মজুতের তথ্য উল্লেখ করেছে। কিন্তু বিএসইসির তদন্ত দল কোম্পানিটিতে কোনো পণ্যের মজুত খুঁজে পায়নি। এমনকি পণ্য মজুতসংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদনও তদন্ত কমিটিকে দেখাতে পারেনি কোম্পানটি।
এ ছাড়া মেঘনা পিইটি ইন্ডাস্ট্রিজ তাদের ২০২১ সালের জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে প্রায় দুই কোটি টাকা ঋণ ও অগ্রিম হিসেবে দেখিয়েছে। বছরের পর বছর এ ঋণ ও অগ্রিমের তথ্য কোম্পানিটি আর্থিক প্রতিবেদনে দেখিয়ে আসছে। বিএসইসির তদন্ত দল এ ঋণ ও অগ্রিমের সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
এর বাইরে কোম্পানিটি প্রায় ১৫ কোটি টাকার জামানতবিহীন ঋণের তথ্যও উল্লেখ করেছে আর্থিক প্রতিবেদনে। কিন্তু বিএসইসির তদন্ত দল এ ঋণের বিষয়ে ব্যাংকের কাগজপত্র ও ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে চাইলে কোম্পানিটি কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। তারা জানায়, এ ঋণ কোম্পানির স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই তথ্যপ্রমাণও দেখাতে পারেনি তারা।
বিএসইসির তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সিকিউরিটিজ আইনের বিধিবিধান লঙ্ঘন করে কোম্পানিটি প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) ও কোম্পানি সচিব পদে একই ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছে। এর বাইরে তারা ২০২০ ও ২০২১ সালের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) এবং পরিচালনা পর্ষদের সভার কোনো তথ্যও তদন্ত কমিটিকে সরবরাহ করতে পারেনি।
এসব অনিয়মের বিষয়ে বিএসইসি কোম্পানির কাছে জানতে চাইলে শুনানিতে মেঘনা পিইটি ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষ থেকে বলা হয়, মালিকানাসংক্রান্ত জটিলতায় কোম্পানিটি চরম মূলধন সংকটে পড়েছে। চলতি মূলধনের অভাবে কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। অর্থ সংস্থান না হলে কোনোভাবেই কোম্পানিটি চালু করা সম্ভব না। অর্থসংকটের কারণে কোম্পানিটিতে জনবলের ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে একাধিক পদে একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।
তবে শুনানিতে কোম্পানির পক্ষ থেকে দেওয়া অনিয়মের ব্যাখ্যা কমিশন গ্রহণ করেনি। তাই কোম্পানিটির পাঁচ পরিচালককে এসব অনিয়মের দায়ে জরিমানা করা হয়েছে।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ২০০১ সালে কোম্পানিটি তালিকাভুক্ত হয়। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দেয়নি। ফলে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে এটিও বর্তমানে নামসর্বস্ব এক কোম্পানি হয়ে আছে। যদিও এটির শেয়ারের বাজারমূল্য এখন ৩৬ টাকা। বর্তমানে এটি ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত।
Source : https://www.prothomalo.com/business/market/eql4fit7zs