নিয়ম অনুযায়ি প্রায় প্রতি মাসেই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার ধারণ বাড়ে ও কমে। বিশেষ করে কোম্পানির শেয়ারদর যখন বেশি ওঠা-নামা করে, তখন কোম্পানির প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারণের পরিমাণ বেশি করে ওঠা-নামা করে। শেয়ারদর যখন বেশি ওঠা-নামা করে, তখন কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালক এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারণেও বেশ হেরফের দেখা যায়।
তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মাসভিত্তিক শেয়ার ধারণের তথ্য বিশ্লেষণে করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
কিন্তু গত কয়েক মাসে তালিকাভুক্ত দুই কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। কোম্পানি দুটি এই সময়ে ডিভিডেন্ড এবং মুনাফার তথ্য প্রকাশের উদ্যোগ নিলেও শেয়ার ধারণের তথ্য হালনাগাদ করেনি।
অভিযোগ রয়েছে, কারসাজি করার কৌশল হিসাবেই কোম্পানি দুটির শেয়ার ধারণের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। কোম্পানি দুটি হলো-খান ব্রাদার্স পিপি ব্যাগে ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড ও বীচ হ্যাচারি লিমিটেড
খান ব্রাদার্স পিপি ব্যাগইন্ডাষ্ট্রিজ
৩১ জুলাই, ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত শেয়ার ধারণের তথ্য প্রকাশ করেছে খান ব্রাদার্স পিপি ব্যাগ ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড। আগের মাসে ৩০ জুন, ২০২৩ তারিখে কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তাদের শেয়ার ছিল ৩০.১৩ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ৩৮.০২ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৩১.৮৫ শতাংশ।
খান ব্রাদার্সের শেয়ার ধারণের চিত্র:
পরের মাসে কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তাদের শেয়ার পরিবর্তন না হলেও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারে বড় পরিবর্তন এসেছে। যার ফলে ৩১ জুলাই, ২০২৩ তারিখে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমে দাঁড়িয়েছে ১৮.৯২ শতাংশে। পক্ষান্তরে, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ৩১.৮৫ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০.৯৫ শতাংশে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই মাসে কোম্পানিটির শেয়ার সাড়ে ১২ টাকায় লেনদেন হয়েছে। যা জুলাই মাসে ৩৯ টাকায় উঠে যায়। এই সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির শেয়ার থেকে মুনাফা তুলেছে। এই কারণেই জুলাই মাসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির ১৯.১০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে।
এরপর কোম্পানিটির শেয়ারদর ব্যাপক ওঠা-নামা করেছে। সর্বশেষ আজ রোববার (১২ নভেম্বর) কোম্পানিটির শেয়ার ৬২ টাকায় ক্লোজিং হয়েছে। এরমধ্যে কোম্পানিটি ডিভিডেন্ড ঘোষণার জন্য দুবার তারিখও জানিয়েছে। কিন্তু গত তিন মাস যাবত শেয়ার ধারণের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেনি।
গত ৯ মাসে কোম্পানিটির শেয়ারদর:
জানা গেছে, কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। সহযোগি একটি কোম্পানির পণ্য উৎপাদন করে কোনো রকমে টিকে রয়েছে। সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি ০১ পয়সা লোকসান, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ০১ পয়সা লোকসান এবং তৃতীয় প্রান্তিকে ০১ পয়সা লোকসান দিয়েছে কোম্পানিটি। তিন প্রান্তিক মিলে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ০৩ পয়সা। তারপরও মতিঝিল পাড়ায় ডিভিডেন্ড ঘোষণার গুঞ্জন জোরেসোরে প্রচার হচ্ছে। যার কারণে কোম্পানিটির শেয়ারদর কেবল উড়ছেই উড়ছে।
উল্লেখ্য, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির অনুমোদন নিয়ে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ১৪টি কোম্পানির উৎপাদন কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে। এরমধ্যে খান ব্রাদার্স পিপি ব্যাগ ইন্ডাষ্ট্রিজও রয়েছে।
বীচ হ্যাচারি লিমিটেড
৩১ জুন, ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত শেয়ার ধারণের তথ্য প্রকাশ করেছে আলোচিত কোম্পানি বীচ হ্যাচারি লিমিটেড। আগের মাসে ৩১ মে, ২০২৩ তারিখে কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তাদের শেয়ার ছিল ৩৪.৯৭ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ১৪.৬২ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৫০.৪১ শতাংশ।
বীচ হ্যাচারির শেয়ার ধারণের চিত্র:
৩০ জুন, ২০২৩ তারিখে কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তাদের শেয়ার পরিবর্তন না হলেও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারে কমেছে। এই সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কমে দাঁড়িয়েছে ১২.৩২ শতাংশে। পক্ষান্তরে, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ৫০.৪১ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২.৭১ শতাংশে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুন মাসে কোম্পানিটির শেয়ার ৪১ টাকার নিচে লেনদেন হয়েছে। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার ৫৩ টাকার ওপরে লেনদেন হচ্ছে।
বীচ হ্যাচারির ৯ মাসে শেয়ারদর চিত্র:
কোম্পানিটি ইতেমধ্যে মুনাফা প্রকাশ করেছে এবং ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ৩০ জুন, ২০২৩ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য কোম্পানিটি ২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে এবং শেয়ারপ্রতি মুনাফা প্রকাশ করেছে ৯৩ পয়সা।
অথচ কোম্পানিটি দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ রয়েছে। কারণ এর প্রজেক্টের জমি সরকার অধিগ্রহণ করেছে। কোম্পানিটি অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারিত অর্থও পেয়েছে। কিন্তু তা বিনিয়োগকারীদের জানায়নি।
আবার মুনাফা কোথা থেকে এসেছে, সেই বিষয়েও খোলাসা করেনি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি, স্টক এক্সচেঞ্জ ও বিনিয়োগকারীদের সাথে কোম্পানিটি রীতিমতো লুকোচুরি খেলছে বলছে বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির বিরুদ্ধে আঙ্গুল তুলেছে। কোম্পানিটির জমি অধিগ্রহণ এবং উৎপাদন সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধানে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি করেছেন বিনিয়োগকারীরা।
Sharenews24.com