গত কয়েক বছরে প্রতিষ্ঠানটির দূরদর্শী চেয়ারম্যান জাভেদ অপগেনহেপেন বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠনকে অধিগ্রহণ করে অনুৎপাদনশীল বেশ কয়েকটি কারখানা ও ইউনিটকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। যার ফল হিসেবে প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক সামর্থ যেমন বেড়েছে তেমনি নতুন কর্মসংস্থানও তৈরি হয়েছে।
২০২০ সালের আগস্টে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এসএস স্টিল চট্টগ্রামভিত্তিক সালেহ স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ অধিগ্রহণ করে। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন ক্ষমতার বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে এর উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে নেয়।
২০২২ সালের মার্চে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় এসএস স্টিল। প্রায় বন্ধ হতে যাওয়া নারায়ণগঞ্জভিত্তিক আল ফালাহ স্টিল ও রি-রোলিং মিল অধিগ্রহণ করার পর এটিকে উৎপাদনের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা দেয়, যাকে বলা যায় নতুন জীবন দেয়ার মতো ঘটনা। প্রতিষ্ঠানটির এই উদ্যোগ টেকসই শিল্প ও ব্যবসায়িক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নেয়ার কৌশলের অংশ। অধিগ্রহণের মতো পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে তারা প্রতিটি প্রতিষ্ঠান কিংবা ইউনিটকে আধুনিকায়ন, পূনর্বাসন ও সম্প্রসারণ অর্থাৎ বিএমআরআই করেছে, যার মাধ্যমে বর্তমান গতিশীল বাজারে নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে পেনিনসুলা ও সুপার স্টিলের স্থায়ী সম্পদ অধিগ্রহণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন ও প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এসএস স্টিলের অঙ্গীকারের দৃঢ় প্রকাশ। এসব প্রতিষ্ঠানের সম্পদ একীভূতকরণ এবং পরিচলন ক্ষমতা নিজেদের হাতে নেয়ার মাধ্যমে এ্সএস স্টিল শুধুমাত্র তার পরিচলনকে নিঁখুত করছে না, বরং দেশের স্টিল খাতের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বড় ভূমিকা রাখছে।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে ব্যবস্থাপনায় এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স ও পলিটিক্যাল সায়েন্স থেকে এমপ্লয়মেন্ট রিলেশনসে ডিগ্রি অর্জনকারী জাভেদ অপগেনহেপেন সবসময়ই প্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক উন্নতি ও অগ্রগতিতে গুরুত্ব দেন।
তাঁর ভাবনা ও বক্তব্যে কোম্পানির নৈতিক জায়গাটি পরিস্কার হয়ে যায়। ‘‘এসএস স্টিল সবসময়ই নতুনের দিকে নজর দেয়।নতুন কিছু করার লক্ষ থেকে নতুন পথ ও উদ্যোগ গ্রহণ করে। সেগুলোকে ব্যবসায়িক পদ্ধতির সঙ্গে একীভূত করতে, খাপ খাইয়ে নিতে ব্যবস্থা নেয়। সব কিছুর পেছনে থাকে গ্রাহকদের দোরগোড়ায় সেরা পণ্য পৌঁছে দেয়া।
ব্যবসায়িক কৌশলের পাশাপাশি এসএস স্টিল সবসময়ই আধুনিক প্রযুক্তির ওপর গুরুত্ব দেয়। কোম্পানির চেয়ারম্যান জাভেদ অপগেনহেপেন প্রতিষ্ঠানের টেকসই অগ্রগতির কথা মাথায় রেখে গুরুত্ব দেন সবশেষ মডেলের ইনডাকশান ফার্ণেস প্রযুক্তিতে যার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী লোহা গলন প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়।
বর্তমানে এএস স্টিল, সালেহ স্টিল, আল ফালাহ স্টিল, পেনিনসুলা ও সুপার স্টিল এর সমন্বিত উৎপাদন ক্ষমতা বছরে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন এম এস রড।
রাজধানীর অদুরে টঙ্গীতে অবস্থিত কারখানাটি তার উৎপাদিত পণ্য স্বনামধন্য ব্র্যান্ড এএস টাইগার বি৪০০ ডিডব্লিউআর/৬০জি টিএমটি বার এবং এএস টাইগার বি৫০০ সিডব্লিউআর টিএমটি বার নামে বাজারজাত করে।
এসএস স্টিল ও এর সহযোগি স্টিল উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোতে বর্তমানে প্রায় ১৭৫০ কর্মী কাজ করে। এসব কোম্পানি শুধু এমএস বিলেট বা এমএস রড উৎপাদনেই নিয়োজিত নয়। পাশাপাশি ক্রেতাদের দোরগোড়ায় এসব পণ্য পৌছে দিতে কাজ করছে।
এসএস স্টিল এবং এর সহযোগি স্টিল উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর সব ইউনিট মিলে বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ২১৫০ কোটি টাকা। আগামি অর্থ বছরে এটি ৩০০০ কোটি টাকায় পৌছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। যার মাধ্যমে ২০১৯ সালে ডিএসই ও সিএসইতে তালিকভূক্ত কোম্পানিটির টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রমাণ দেয়।
এই সফলতার গল্প শুধুমাত্র শুধুমাত্র এসএস স্টিল বাংলাদেশে স্টিল বাজারে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে যেতেই সহায়তা করেনি। একইসঙ্গে কৌশলগত একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণকে ব্যবসায়িক অগ্রগতির অন্যতম প্রধান উপকরণ হিসেবেও প্রমাণ করেছে।
SSSTEEL Acquisition Merger