কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ) ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী, যেসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ধারাবাহিকভাবে ২৪ মাস পর্যন্ত ১৪ শতাংশের বেশি এবং ক্যাপিটাল টু রিস্ক ওয়েটেড অ্যাসেটস রেশিও (সিআরএআর) ৫ শতাংশের কম থাকবে, সেসব ব্যাংক চতুর্থ ক্যাটাগরিতে পড়বে। আর এই ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ব্যতীত নতুন করে গ্রাহকদের থেকে আমানত সংগ্রহ করতে পারবে না; একইসঙ্গে নতুন করে ঋণ অনুমোদনও করতে পারবে না।
আর্থিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা বজায় রাখার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নতুন ফ্রেমওয়ার্ক চালু করেছে। এর আওতায় দেশের তফসিলভুক্ত ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ ও ক্যাপিটাল রেশিও এর ওপর ভিত্তি করে চার ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ) ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী, যেসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ধারাবাহিকভাবে ২৪ মাস পর্যন্ত ১৪ শতাংশের বেশি এবং ক্যাপিটাল টু রিস্ক ওয়েটেড অ্যাসেটস রেশিও (সিআরএআর) ৫ শতাংশের কম থাকবে, সেসব ব্যাংক চতুর্থ ক্যাটাগরিতে পড়বে। আর এই ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ব্যতীত নতুন করে গ্রাহকদের থেকে আমানত সংগ্রহ করতে পারবে না; একইসঙ্গে নতুন করে ঋণ অনুমোদনও করতে পারবে না।
যদি কোনো ব্যাংকের ক্যাপিটাল রেশিও ১০ শতাংশের বেশি এবং খেলাপি ঋণ ৮ শতাংশের কম হয় এবং এমন আর্থিক অবস্থা যদি ৬ মাস পর্যন্ত অতিবাহিত করে, তাহলে সেই ব্যাংক প্রথম ক্যাটাগরিতে পড়বে। গতকাল জারি করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলার অনুসারে, এসব ব্যাংক তার শেয়ার হোল্ডারদের কোনো ধরনের ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে পারবেন না। অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নিয়ে ব্যাংকগুলো স্টক ডিভিডেন্ড বণ্টন করতে পারবে।
টানা ১২ মাস যে সকল ব্যাংকের ক্যাপিটাল রেশিও ১০ শতাংশের নিচে এবং নন-পারফর্মিং লোন বা খেলাপি ঋণ ৮ শতাংশের বেশি থাকবে, সেসব ব্যাংক দুই দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে পড়বে।
আয় ধরে রাখতে এই ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ বণ্টনের অনুমোদন দেওয়া হবে না; একইসঙ্গে ব্যাংকগুলোর পরিচালন ব্যয়ের জন্য অনুমোদিত বৃদ্ধির হার পূর্ববর্তী বছরের ব্যয়ের ৫ শতাংশে সীমাবদ্ধ থাকবে।
ক্যাপিটাল রেশিও ৮ শতাংশের নিচে এবং নন-পারফর্মিং লোন ১১ শতাংশের বেশি হলে সেসব ব্যাংক তৃতীয় ক্যাটাগরিতে পড়বে।
এই ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সাথে কোনো ধরনের নতুন লেনদেনে জড়াতে অয়ারবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্মতি ছাড়া দেশে বা বিদেশে নতুন শাখা, উপ-শাখা বা সহায়ক সংস্থা খুলতে পারবে না।
এছাড়া, এ ধরনের ব্যাংক দেশে বা বিদেশে তাদের বিদ্যমান সহায়ক সংস্থাগুলোতেও তাদের বিনিয়োগ বাড়ানো থেকে বিরত থাকবে। এই ব্যাংকগুলো কেবল অটোমেশন বা প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সম্পর্কিত মূলধন ব্যয় করতে পারবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ২০২৪ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ব্যাংকগুলোতে এই চার ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হবে। এবং ফ্রেমওয়ার্কটি কার্যকর হবে আগামী ২০২৫ সালের মে মাস থেকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, “বেনামী ঋণ, তারল্য সংকট, উচ্চ খেলাপির হার, পরিচালক নিয়োগে পারিবারিক দৌরাত্ম ব্যাংক খাতকে সংকটে ফেলেছে। সংকটের চাপ সামলাতে অধিকাংশ ব্যাংক ধার-দেনা করে চলছে। পাশাপাাশি ব্যাংকে সুশাসনের অভাব দেখা দেওয়ায় ব্যাংকগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই আইএমএফ এর নির্দেশনা অনুযায়ী এমনটা করা হয়েছে।”
এদিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তিতে ব্যাপক পলিসিগত সংস্কার করতে বলেছেন। তারই অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পলিসিগত বেশকিছু পরিবর্তন এনেছে।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসলে এবং টানা চার প্রান্তিক একই অবস্থা রাখতে পারলে ফ্রেমওয়ার্ক থেকে ওই ব্যাংককে বাদ দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিবিএসকে বলেন, ব্যাংকিং খাত বহুমুখী সংকটের সম্মুখীন। কাল্পনিক ঋণ, তারল্য সংকট, উচ্চ খেলাপি হার এবং বোর্ড নিয়োগ স্বজনপ্রীতি– এই খাতকে জর্জরিত করেছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলোকে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে মূলধন ধার করতে হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা এবং বৃহত্তর অর্থনীতিতে দুর্বল ব্যাংকগুলোর প্রতিকূল পরিস্থিতির প্রভাব রোধে প্রাথমিক পদক্ষেপের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
source: tbsnews.net
central bank rule weak bank abandoned debt loan