রেমিট্যান্স প্রাপ্তিতে শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে এ বছরও নিজের অবস্থান সাতে ধরে রাখতে পারবে বাংলাদেশ। গত নভেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবাহ পর্যালোচনায় এমনটিই মনে করছে বিশ্বব্যাংক। ২০২২ সালেও বাংলাদেশের অবস্থান ছিল সপ্তম। গত বছরের মতো এবারও বাংলাদেশের আগে থাকছে ভারত, মেক্সিকো, চীন, ফিলিপাইন, মিসর ও পাকিস্তান।
নভেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবাহ পর্যালোচনা শেষে বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলন হলো, এ বছর বাংলাদেশে প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসতে পারে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ২০ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার।
বিশ্বব্যাংক বলছে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি আগের দুই বছরের তুলনায় এ বছর কম। আগের দুই বছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ গড়ে প্রায় ৯ শতাংশ বেড়েছিল। ২০২৩ সালে প্রবৃদ্ধির হার হতে পারে ৩ দশমিক ৮০ শতাংশ।
গত জুনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছিল, চলতি বছর এসব দেশে মোট রেমিট্যান্স আসতে পারে ৬৬৯ বিলিয়ন ডলার। তবে নভেম্বর শেষে সংস্থাটি বলছে, ওই প্রক্ষেপণের চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে দেশগুলোতে। ওইসিডি ও উপসাগরীয় দেশগুলোতে চাকরির বাজার শক্তিশালী হওয়ার কারণে বিশ্বব্যাপী রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর রেমিট্যান্স প্রাপ্তিতে সর্বাধিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে লাতিন এবং ক্যারিবীয় দেশগুলোর। ৭ দশমিক ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে এর পরের অবস্থানে থাকছে দক্ষিণ এশিয়া।
চীনের রেমিট্যান্সে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পরও পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর রেমিট্যান্সে এ বছর প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ শতাংশ। সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলে এটি হতে পারে ১ দশমিক ৯০ শতাংশ।
তবে ডলারের মূল্যমান কমার কারণে ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ ১ দশমিক ৪০ শতাংশ কমবে। মধ্য এশিয়া এবং উত্তর আমেরিকায় রেমিট্যান্স প্রবাহ গত বছরের তুলনায় কমবে ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। এর কারণ ব্যাখ্যায় বিশ্বব্যাংক বলছে, ব্যাংকিং চ্যানেলের তুলনায় অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে বিনিয়ম হার বেশি থাকায় বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমেছে এসব দেশে।
বাংলাদেশেও একই কারণে কাঙ্ক্ষিত রেমিট্যান্স আসছে না বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। বহু বছর কৃত্রিমভাবে বিনিময় হার ধরে রাখার পর ২০২১ সালের আগস্ট থেকে কিছুটা শিথিল করতেই ডলারের বিপরীতে টাকার মান বৈধ চ্যানেলে প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যায়। খোলাবাজারে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠানো প্রতি ডলারের বিপরীতে যেখানে ১১৩ টাকা মিলেছে, সেখানে হুন্ডিতে প্রায় ১৩০ টাকা পর্যন্ত মিলেছে। এ কারণে অনেকে বৈধ মাধ্যম ছেড়ে অবৈধ প্রক্রিয়া হুন্ডিতে দেশে অর্থ পাঠিয়েছেন। বিশ্বব্যাংক নভেম্বরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ক্ষেত্রে এ সমস্যাটির কথা উল্লেখ করেছে।
বিশ্বব্যাংক বলেছে, এ বছর সারাবিশ্বে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে ৮৬০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে, যা গত বছরের তুলনায় ২৪ বিলিয়ন ডলার বেশি। এর মধ্যে ১৮৯ বিলিয়ন ডলারই পেতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশ। আবার এসব দেশের মধ্যে সর্বাধিক ১২৫ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাবে ভারত। আগের বছরের মতো এবারও শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, পুরো বিশ্বে শীর্ষে থাকবে দেশটি। বিশ্বব্যাংক বলছে, এ বছর ভারত ও বাংলাদেশ ছাড়াও নেপাল ও শ্রীলঙ্কার রেমিট্যান্স আয় বেড়েছে। তবে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভুটান ও মালদ্বীপের কমছে।
বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ৬৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স নিয়ে মেক্সিকো দ্বিতীয় অবস্থানে এবং ৫০ বিলিয়ন ডলার নিয়ে চীন তৃতীয় অবস্থানে থাকবে। এ ছাড়া চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ অবস্থানে থাকবে ফিলিপাইন, মিসর এবং পাকিস্তান। বাংলাদেশের পরে থাকবে নাইজেরিয়া, গুয়েতেমালা ও উজবেকিস্তান।
source: samakal.com
remittance Bangladesh world bank rank 7th