July 27, 2024 8:41 am
Home Stock Market বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে কর কাঠামো সহজ করতে হবে

বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে কর কাঠামো সহজ করতে হবে

by fstcap

stockmarket sharebazar pujibazar investment Bsec dse cse

দক্ষিণ এশিয়ায় সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) খুবই কম। এফডিআই বাড়াতে এ অঞ্চলের দেশগুলোতে কর কাঠামো আরও সহজ করা দরকার। সেই সঙ্গে নিজেদের মধ্যে আস্থার পরিবেশ তৈরি করে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে সম্ভাবনাময় এই অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন।
গতকাল রোববার ঢাকার শেরাটন হোটেলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত দু’দিনব্যাপী দক্ষিণ এশীয় অর্থনৈতিক সম্মেলনের শেষ দিন ভ্যালু চেইন এবং সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে একটি অধিবেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতা ও গবেষকরা। ভারতের ড. বিআর আম্বেদকর স্কুল অব ইকোনমিকসের (বিএএসই) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এন আর ভানুমূর্তি এতে সভাপতিত্ব করেন।

ড. এন আর ভানুমূর্তি বলেন, নব্বইয়ের দশকে বাণিজ্য বাড়াতে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলো গ্লোবাল ভ্যালু চেইনের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সুবিধা পায়। এ সুবিধা কাজে লাগিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর দুর্বলতা হচ্ছে গ্লোবাল ভ্যালু চেইনে মধ্যবর্তী ও মূলধনি পণ্য তুলনামূলকভাবে কম। তা ছাড়া পণ্য উৎপাদন খরচ কমিয়ে প্রতিযোগিতা বাড়াতে এসব দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা তেমন দেখা যায় না। আগামীতে এ অঞ্চলের বাংলাদেশ, নেপাল এবং ভুটান স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে যাবে। এলডিসি-উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশগুলো দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে ভ্যালু চেইনে অংশগ্রহণ বাড়াবে বলে আশা করেন তিনি।
আঙ্কটাডের তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২২ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় এফডিআই আসে ৫ হাজার ৫৮৭ কোটি ডলার। এটি সারাবিশ্বের এফডিআই প্রবাহের মাত্র ৪ দশমিক ৩০। ভ্যালু চেইনের সুবিধা থাকায় আরও বেশি পরিমাণে বিদেশি বিনিয়োগ আসা উচিত ছিল।

কিন্তু এই অঞ্চলে কার্যকর অর্থনৈতিক করিডোরের অভাব, প্রতিবেশীদের মধ্যে বিরোধ ও অবিশ্বাস, বাণিজ্য সুবিধা এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে ধীরে চলো নীতির পাশাপাশি কিছু অশুল্ক বাধার
কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোট গঠন সম্ভব হচ্ছে না। এসব বাধা কাটিয়ে উঠতে পারলে আরও বেশি পরিমাণে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টের পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক জোট হিসেবে আত্মপ্রকাশের সুযোগ রয়েছে।

প্যানেল আলোচক হিসেবে অংশ নিয়ে ভারতের মণিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. প্রিয়রঞ্জন সিং বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর নিজ নিজ ক্ষেত্রে যথেষ্ট অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে এ অঞ্চলের উন্নয়ন সেভাবে হয়নি। আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে সার্ক গঠিত হলেও তা এখন পর্যন্ত তেমন কাজে আসেনি। পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সার্কের আওতায় থাকা আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক ঐকমত্য থাকাও জরুরি।

শ্রীলঙ্কার সিলন চেম্বার অব কমার্সের সেক্রেটারি জেনারেল বুওয়ানেকা পেরেরা বলেন, এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এটি অনুপস্থিত। তা ছাড়া ব্যবসা পরিচালনার জন্য সাতটি দেশে পৃথক পৃথক জটিল কর কাঠামো বিদ্যমান। এ ক্ষেত্রে সব দেশের কাছে গ্রহণযোগ্য সহজ করনীতি প্রণয়ন করা যায় কিনা, সেটি ভাবতে হবে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় সাশ্রয়ী শ্রমের সুবিধা ধীরে ধীরে কমে আসছে। তাই আরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগ দরকার। এফডিআই প্রয়োজনীয় তহবিল সরবরাহের পাশাপাশি গ্লোবাল ভ্যালু চেইনে অংশগ্রহণ বাড়াতে সক্ষম করে তোলে। কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে (সিএমএসএমই) বিনিয়োগ সহজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।

অধিবেশনে অন্য বক্তারা বলেন, এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পণ্য আনা-নেওয়ায় ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে এক দেশ থেকে আরেক দেশে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে খাদ্যপণ্যের যৌক্তিক দাম ও কম পরিবহন খরচ নিশ্চিত করতে হবে। সার্ক চেম্বার অব কমার্সের প্রধান ভূমিকা হওয়া উচিত বেসরকারি খাতের মধ্যে মধ্যস্থতা করা। শুধু বড় শিল্পই নয়, সিএমএসএমই খাতের বিনিয়োগ নিয়েও কাজ করতে পারে তারা। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সবুজায়নে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

You may also like