টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের সাথে সামঞ্জস্য রেখে, একটি স্বয়ংক্রিয় ও কাঠামোগত কমোডিটি এক্সচেঞ্জ স্থাপন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কমোডিটি এক্সচেঞ্জ হল একটি সংগঠিত বাজার ব্যবস্থা (মার্কেট প্লেস), যেখানে ক্রেতা এবং বিক্রেতারা এক্সচেঞ্জ দ্বারা নির্ধারিত নিয়ম অনুসরণ করে কমোডিটি সম্পর্কিত কন্ট্রাক্ট লেনদেন করে থাকেন। পার্শ্ববর্তী এবং অন্যান্য দেশের উদাহরণ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, একটি মানসম্পন্ন কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠা, বাজার সংশ্লিষ্টদের সুবিধা দেয়ার পাশাপাশি জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। এটা দেশের কমোডিটি সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার যেমন– কৃষক, উৎপাদক, বাজারজাতকারী, রপ্তানিকারক, আমদানিকারক থেকে শুরু করে শেষ ব্যবহারকারী পর্যন্ত একটি নির্ভরযোগ্য মূল্য আবিষ্কার এবং মূল্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সংস্কৃতি তৈরি করে। একটি কাঠামোগত কমোডিটি এক্সচেঞ্জের বিকাশ মধ্যস্ততাকারীদের দৌরাত্ম্য হ্রাস করার পাশাপাশি চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ এবং ঢাকার মৌলভীবাজারের মত বিদ্যমান বাজার সংশ্লিষ্টদের মূল্য ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে বাজার দক্ষতা বৃদ্ধি করবে। যার সুফল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সকল স্তরে পৌঁছাবে এবং একই সাথে তা সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে।
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ ধারণাটি বাংলাদেশের জন্য নতুন হলেও বিশ্বের অধিকাংশ দেশে এটি বহু আগে থেকেই প্রচলিত। চীন ১৯৯৩ সালে, ভারত ২০০২ সালে, পাকিস্তান ২০০৭ সালে এবং নেপাল ২০০৯ সালে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠা করে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজার এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপে চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি (সিএসই) সব সময়ই অগ্রনী ভূমিকা পালন করে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় সিএসই তার অগ্রগামী উন্নয়ন পন্থার অংশ হিসেবে বাংলাদেশে একটি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২০২১ সালের শেষ দিকে সিএসইকে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার জন্য অনুমতি প্রদান করে। জ্ঞান ভিত্তিক ব্যবধান, ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি এবং কঠোর বাস্তবায়ন পদ্ধতি এই নতুন যুগের সূচনা করার পথে প্রধান বাধা হিসেবে প্রতীয়মান হয়। সিএসই ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ (এমসিএক্স)-কে এই প্রজেক্টের কনসালটেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয় এবং সিএসই বোর্ডের সদস্য মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) এমদাদুল ইসলামকে প্রধান করে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করে যা ধাপে ধাপে একটি বাস্তব সম্মত একশন প্ল্যান নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
আমাদের পুঁজিবাজারের জন্য সম্পূর্ণ নতুন এই এসেট ক্লাস প্রতিষ্ঠা করার অগ্রযাত্রায় আইনি এবং প্রযুক্তিগত কাঠামো তৈরি করা ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি বাজার সংশ্লিষ্টদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাটাও এখানে জরুরি। তবে, এখন আমরা অনেকটা গর্বের সঙ্গেই বলতে পারি, বাংলাদেশের প্রথম কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠা আর স্বপ্ন নয়, যা বিপুল উৎসাহের সাথে একটি প্রত্যাশিত যাত্রাপথে বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিএসইসি’র চলমান সমর্থন এবং সিএসই ম্যানেজমেন্টের সদিচ্ছা ও পরিশ্রমের ফলে আইনি কাঠামো (নিয়ম এবং প্রবিধান) প্রায় চূড়ান্ত এবং প্রযুক্তিগত কাঠামো (আইটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার) গঠনের প্রক্রিয়া দ্রুত চলমান। ফলস্বরূপ, সিএসই ২০২৪ সালের মধ্যেই কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুর আশা করছে। এই কঠিন কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নের বিভিন্ন সময় উঠে আসা অন্তরায়গুলো মোকাবেলায় সিএসই টিম এবং ব্যবস্থাপনা যে আবেগ ও দক্ষতা দেখিয়েছে তা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার; যা আমাদের পুঁজিবাজার এবং সামষ্টিক অর্থনীতিতে আশাবাদী প্রভাব ফেলবে।
Source: dainikazadi
Commodity Exchange